বই রিভিউ: ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম
ধরুন, আপনার কোন বন্ধু আপনার ধর্ম 'ইসলাম' সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, অথবা অন্যকোন বন্ধু যে কিনা ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর ভুল ধরতে ব্যস্ত; এই রকমের কেউ আপনাকে প্রশ্ন করলো, 'মানবতার দাবিদার ইসলাম ধর্ম কিভাবে দাসপ্রথার মত নির্মমতাকে নিষিদ্ধ না করে বৈধতা দিয়েছে?'
অথবা জানতে চাইলো ইসলাম একটা সংকীর্ণ ধর্মের নাম, কারণ এখানে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা দেয়া হয়নি; আবার কেউ ইসলাম ত্যাগ করলে (মুরতাদ হয়ে গেলে) তাকে হত্যা করার নির্দেষ দেয়া হয়েছে, এটা কেন?
আবার কেউ কেউ তো হরহামেশাই বলে থাকে, আমি ভাই ওসব ধর্ম-কর্মের আফিম গিলতে চাই না। বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে ধর্ম অর্থহীন। এরকম আরো ডজন ডজন প্রশ্নে আপনি বিব্রত হয়ে যাবেন যদি জবাব না জানা থাকে। কিন্তু সঠিক জ্ঞান কোথায় পাওয়া যাবে?
হ্যা, এমন আরো অনেক জিজ্ঞাস্য বিষয় নিয়ে মিসরীয় লেখক মুহাম্মাদ কুতুব লিখেছেন Misconceptions about Islam. বাংলায় এটি প্রকাশিত হয়েছে 'ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম' নামে। আমার কাছে যে অনুবাদ বইটি আছে সেটি সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেনের সম্পাদনায় বইটির অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফীজুর রহমান ও ড. হাসান জামিল এবং সাংবাদিক আখতার ফারুক।
মুহাম্মদ কুতুব ছিলেন মিশরের সাবেক প্রধান বিচারপতি। বিচারকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধর্মের ব্যপারে যে মিসকন্সেপ্ট গুলো তার সামনে পড়েছে সেগুলোর জবাব খুঁজতে গিয়েই লিখেছেন পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত এই বইটি।
প্রাঞ্জল ভাষায়, যুক্তি ও তথ্য সহকারে তিনি ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে ইসলামের শ্রেষ্টত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেন। এক দিকে ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে শতাব্দীকালের অজ্ঞতা, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, অন্যদিকে সমকালীন পাশ্চাত্য সভ্যতার সর্বগ্রাসী সয়লাব ইসলাম সম্পর্কিত বিভ্রান্তির মূল কারণ।
আসলে সমালোচনাকারীদের সমালোচনার জবাব দেয়ার জন্য এই বইটি লেখক লিখেননি। মূলত একশ্রেণীর শিক্ষিত তরুণদের লক্ষ্য করে তিনি বইটি লিখছেন, যারা সত্যটাকে জানতে চায়।
ধরুন, বর্তমান সময়ের অনেক তরুণের মাথায় ঢুকেছে ধর্ম এবং রাষ্ট্র আলাদা। যেমন আমাদের দেশে বলা হয়, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। বিজ্ঞানের এই যুগে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। ফ্রয়েডের কথাই ধরুন, তিনি আধুনিক যুগে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অবান্তর করে দিয়ে বলেছেন, 'মানুষের জীবন তিনটি মনস্তাত্ত্বিক স্তর পার হয়ে চলেছেঃ কুসংস্কার, ধর্ম ও বিজ্ঞান। এখন বিজ্ঞানের যুগ আসায় ধর্ম অচল হয়ে গেছে।'
এমন ধারণা পোষণকারী তরুণদের জানা নেই, অথবা তারা জানতে চায় না, বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের এই বিরোধ কোথা থেকে শুরু হয়েছে?।
বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। যার শুরুটা হয়েছে ইউরোপে। সেখানে ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে ভয়ংকর একটা বিরোধ লেগেছিল। যার ফলশ্রুতিতে সেক্যুলারিজমের উদ্ভব হয়েছিল।
ধর্ম আর বিজ্ঞানের দ্বন্ধটা ইউরোপের ছিল। ইসলামের সাথে এর কি সম্পর্ক আছে?
না নেই। কারণ বিজ্ঞানের এমন কোন তত্ত্ব (theory) পাওয়া যাবে না যার সাথে ইসলামের বিরোধ আছে। বরং মুসলিমরা যখন এই পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছেল, তখন চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, পদার্থ, রসায়নসহ বিজ্ঞানের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা উচ্চতর শিখরে উঠেছিল । বড় বড় বিজ্ঞানীদের সবাই ছিলেন প্রাক্টিসিং মুসলিম।
ধর্ম কি মানব জীবনের জন্যে সত্যি অপরিহার্য? অতীতে হয়ত তা-ই ছিল। কিন্তু বর্তমানে যখন বিজ্ঞান মানব জীবনের সমগ্র ধারাকে পরিবর্তিত করে দিয়েছে এবং বাস্তব জীবনের বৈজ্ঞানিক সত্য ছাড়া অন্য কিছুর আদৌ কোন স্থান নেই তখন উক্ত দাবী সংগত হতে পারে কি? ধর্ম কি মানুষের জন্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন?
আধুনিক শিক্ষিত তরুণদের মাথায় উদিত হওয়া অনেক প্রশ্নেরই সমাধান রয়েছে এই বইটিতে। শান্ত মনে জানবার জন্য পড়তে চাইলে এটি বাতিঘরের কাজে দেবে আপনাকে।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন