মোগলনামা-৫ (যে হিন্দু নারীর কারণে সম্রাট হুমায়ুন রাজ্য হারিয়েছিলেন)
সম্রাট হুমায়ুন মোগল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বাদশাহ ছিলেন। প্রতিষ্ঠাতা বাবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র হুমায়ুন মসনদে বসেন ১৫৩০ সালে।
কিন্তু এর ১০ বছর পর ১৫৪০ সালে তিনি বাদশাহ শের শাহ'র কাছে পরাজিত হয়ে রাজ্য হারান।
শেরশাহ এর আগেও আক্রমণ করেছিলেন, কিন্তু হুনায়ুনের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। এরপর শের শাহ ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। অবশেষে পেয়েও গেলেন তিনি। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দিল্লি-আগ্রা দখলও করে নেন ইতিহাসের সেরা এই শাসক। হুমায়ুন পালিয়ে যান ইরান।
সম্রাট হুমায়ুন তখন হিন্দুস্তানের রাজ্যগুলোর অন্যতম শক্তিশালী শাসক। একদিন তার কাছে একটি পত্র এলো। সেই সাথে এলো একটি কয়েকটি সুতার একটি খণ্ড। যাকে 'রাখি' বলা হয়।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন রানী কর্ণবতি। তিনি ছিলেন বিধবা। তার একমাত্র সন্তানটি তখনো শিশু। এরমধ্যেই তাদের রেখে রাজা মারা যান। শিশুপুত্রকে নিয়ে বিধবা রানী কর্ণবতী রাজ্য চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন। এরইমধ্যে মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে বেজে উঠলো যুদ্ধের ঘোষণা।
রানীর দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে পাশ্ববর্তী এক রাজা কর্ণবতীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। এই যুদ্ধের অর্থ হচ্ছে, রানীর নিশ্চিত পরাজয় আর রাজ্যা হারানোর ভয়। উপায়ান্তর না দেখে রানী সম্রাট হুমায়ুনের কাছে চিঠি ও রাখিটি পাঠান।
চিঠিতে রানী লেখেন, 'আমি আপনাকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করতে এই রাখি পাঠালাম, আপনি হাতে পরবেন এবং আমাকে বোন হিসেবে ও আমার শিশুপুত্রকে ভাগ্নে হিসেবে সসৈন্যে এসে রক্ষা করবেন।'
হিন্দু নারীর সেই সূতো হুমায়ুন হাতে পরলেন এবং সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওয়ান দিলেন। স্বয়ং নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি তার হিন্দু বোন আর ভাগ্নে ও তাদের রাজ্য রক্ষা করবার জন্যে। একটি যুদ্ধাবাহিনী মূল্যহীন হয়ে গেল মাত্র সুতোর কাছে।
দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সম্রাট হুমায়ুন পৌঁছলেন সেই বোনের রাজ্যে। কিন্তু তাঁর পৌঁছার আগেই ভয়ে ভীত হয়ে রানী বিষপান করে আত্মহত্যা করলেন।
হুমায়ুন যখন এই সংবাদটি শুনলেন তাখন শিশুর মত কেঁদে বুক ভাসালেন। তিনি এতটাই কাঁদলেন যে মনেই হচ্ছে না এটা তার অদেখা এক পাতানো হিন্দু বোন। বরং মনে হচ্ছিল আপন বোনকেই হারিয়েছেন সম্রাট।
এদিকে রাজধানীতে সম্রাট ও তার সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতির সময়টাই কাজে লাগালেন শের শাহ। তিনি অঘোষিত যুদ্ধে হুমায়ুনকে পরাজিত করে দখল করে নেন মোগল মসনদ। রাজ্য হারিয়ে সম্রাট হুমায়ুন আশ্রয় নেন ইস্পাহানে। অবশ্য কয়েক বছর পর শেরশাহর মৃত্যুর পর হুমায়ুন আবারও তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন মৃত্যুর এক বছর আগে।
একজন অচেনা নারীর পাঠানো রাজ্য বাঁচাতে গিয়ে নিজ রাজ্য হারিয়েছিলেন মুসলিম সম্রাট হুমায়ুন। এই মুসলিমরা ইন্ডিয়াকে শাসন করেছে প্রায় ১০০০ বছর। অথচ সেই হিন্দু ধর্মের অনুসারীরাই গতকাল একজন মুসলিম প্রেগন্যান্ট মহিলাকে জেলে পুড়েছে সন্ত্রাসের অভিযোগে। কিন্তু এই সন্ত্রাসটাই চালিয়েছে রাষ্ট্র কয়েকদিন আগে দিল্লিতে মুসলিমদের ওপর। মারার আবার জেলে ডুকানো হচ্ছে মুসলিমদের!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন