বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সীমাবদ্ধতাঃ দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা
১. সূচনা:
গণমাধ্যম বর্তমান সময়ের
সবচেয়ে শক্তিশালি মাধ্যমের নাম। সমাজে গণমাধ্যম তথা মিডিয়ার প্রভাব অনস্বিকার্য। এর
প্রয়োজনীয়তা উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে। গণমানুষের দীর্ঘদিনের চলমান ক্রিয়া, কৃষ্টি পরিবর্তনে
মিডিয়ার প্রভাব বিপুল, বহু-বিচিত্র, পরিব্যাপ্ত। মিডিয়ার শক্তিশালি অবস্থান এবং এ নিয়ে
কোন সন্দেহের অবকাশ না থাকা নিয়ে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ব্যারান বলেন: সমাজের ওপর মিডিয়ার
প্রভাব আছে কিনা সেই প্রশ্ন তোলা আর শিশুর ওপর মায়ের প্রভাব আছে কিন্ত সেই প্রশ্ন জিজ্ঞেস
করার মতোই বাহুল্য।
চলচ্চিত্র গণমাধ্যমের একটি
গুরুত¦পূর্ণ এবং জনপ্রিয় উপাদান। এটি এক প্রকারের দৃশ্যমান
বিনোদন মাধ্যম। চলমান চিত্র তথা “মোশন পিকচার” থেকে চলচ্চিত্র শব্দটি এসেছে। যা একটি
বিশেষ শিল্প মাধ্যম। বাস্তব জগতের চলমান ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করে বা এনিমেশনের
মাধ্যমে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রের ধারণা অনেক পরে
এসেছে, ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে। আর এনিমেশন চিত্রের ধারণা এসেছে আরও পরে। বাংলায় চলচ্চিত্রের
প্রতিশব্দ হিসেবে ছায়াছবি, সিনেমা, মুভি বা ফিল্ম শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়।
চলচ্চিত্রের সাথে ওতোপ্রোতভাবে
জড়িয়ে থাকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ। যে সংস্কৃতিতে তা নির্মিত হয় তাকেই প্রতিনিধিত্ব
করে চলচ্চিত্রটি। শিল্পকলার প্রভাবশালী মাধ্যম, শক্তিশালী বিনোদন মাধ্যম এবং শিক্ষার
অন্যতম সেরা উপকরণ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে চলচ্চিত্রের। ছায়াছবির সাথে ভিজ্যুয়াল বিশ্বের
সমন্বয় থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে ভাল যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্য কোন শিল্পমাধ্যম
সাধারণের সাথে এতোটা যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম নয়।
বাংলা চলচ্চিত্র বা বাংলা
সিনেমা ১৮৯০ সালে ভারতের কলকাতায় বায়োস্কোপ নামে শুরু হয়েছিল। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের কলকাতায়
বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বায়োস্কোপ কো¤পানি
গঠন করেন মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরী গ্রামের হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)। তাঁর প্রতিষ্ঠিত
কো¤পানির নাম দ্য রয়েল বায়োস্কোপ কো¤পানি। তিনিই ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম চলচ্চিত্র
নির্মাতা। তাঁর তোলা খন্ডচিত্র (নাটক থেকে) সীতারাম, আলীবাবা, দোললীলা, ভ্রমর, হরিরাজ
বুদ্ধ ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার স্টার থিয়েটার ও ক্ল্যাসিক থিয়েটারে
প্রদর্শিত হয়। তিনি প্রামাণ্য চিত্র, বিজ্ঞাপন চিত্র এবং সংবাদচিত্রও নির্মাণ করেন।[১] বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্র (বাংলা সিনেমা) ভারতের
কলকাতা থেকে এবং বাংলাদেশের ঢাকা থেকে তৈরি হয়।
একসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র
ছিল বেশ জনপ্রিয়। ছাত্র-শিক্ষক, পিতা-মাতা ও সন্তান, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোনসহ সমাজের
নানা শ্রেণীর, নানা পেশার মানুষেরা হলে গিয়ে বাংলা সিনোমা দেখতো। মুখ ও মুখোশ থেকে
শুরু করে জীবন থেকে নেয়া, আবার তোরা মানুষ হ, এখনো অনেক রাত, ছুটির ঘন্টা, কমলার বনবাস,
রূপবান, বেদের মেয়ে জোসনা, মরনের পরে, বাবা কেন চাকর, সুজন সখি ইত্যাদি চলচ্চিত্র এই
দেশের মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এসব চলচ্চিত্রে নতুন শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত
মানুষের জীবনের সরল কাহিনী, কিংবা গ্রামের স্বার্থান্বেষী মোড়ল ও কৃষকের গল্প হত্যাদি
ফুটে উঠতো। যা সেই সময়ে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
কিন্তু আমাদের বাংলা সিনেমার
সেদিন আর নেই। বাংলা সিনেমার প্রসার কমেছে বললে কম বলা হবে, রীতিমতো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
উপস্থিত হয়েছে। অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমের বিকাশ সিনেমার প্রবল প্রতাপকে কমিয়ে দিয়েছে
পৃথিবীর অন্যত্রও। তবে শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে টিকে আছে সিনেমা।[২] সিনেমা টিকে গেলেও
বাংলাদেশে এর অবস্থা বেশ সুখকর নয়। কাহিনীর অতিরঞ্জন, ভাবপ্রবণতা, গল্পকাঠামোর সঙ্গে
অপ্রাসঙ্গিক নাচ-গান, অতিঅভিনয়, বাজেটের সীমাবদ্ধতাসহ নানাবিধ কারনে বাংলা সিনেমার
অবস্থা ক্রমান্বয়ে পশ্চাদপরনতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলা চলচ্চিত্রের
আরেক তীর্থস্থান ওপার বাংলার টালিউড খ্যাত সিনেমা পাড়াটি। ভারতের এই অঙ্গরাজ্যটির চলচ্চিত্রাঙ্গণ
স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গণের তুলনায় বেশ সমৃদ্ধ। বাণিজ্যেক ধারার সিনেমার পাশাপাশি
এখানে আর্ট ফিল্ম বেশ জনপ্রিয়। তবে টালিউডের যে বিষয়টি সমালোচনার দাবী রাখে, তা হল
পাইরেসি। তামিল ও মালায়লামসহ ভারতের বিভিন্ন ভাষার সিনেমাকে নকলের অভিযোগ রয়েছে বাংলা
চলচ্চিত্রের এই রাজ্যে।
এখানে আমি বাংলাদেশ ও কলকাতার
দুইটি চলচ্চিত্রের রিভিউ পর্যালোচনার মাধ্যমে বাংলা সিনেমার সীমাবদ্ধতা, দায়বদ্ধতা
এবং এর সংকট নিয়ে আলোচনা করবো। সে সাথে বাংলা চলচ্চিত্রের মাধ্যেমে সমাজে এর প্রভাব
বিস্তার কতটুকু সে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।
সবশেষে এই আলোচনার মাধ্যমে
সরকার, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও এ সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমূহের আগামী দিনের কর্মপন্থা
কী হতে পারে, সে বিষয়গুলো সুপারিশ আকারে উপস্থাপন রা হবে।
Key words: বাংলা চলচ্চিত্র,
সিনেমা, ফিল্ম, এফডিসি, বাংলা ছবি, বাংলা সিনেমা, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২, বেলাশেষে,
ঢালিউড, টালিউড, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস, মুভি রিভিউ
২. ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস বেশ পূরনো। স্বাধীনতার
পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান থাকাকালিনও এখানে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। সর্বপ্রথম
১৮৯০-এর দশকে এদেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল। এই সূত্র ধরে এই অঞ্চলে ১৯০০-এর
দশকে নির্বাক এবং ১৯৫০-এর দশকে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। চলচ্চিত্র
মঞ্চের উৎপত্তি ১৯১০-এর দশকে হলেও এখানে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি
হয়েছে ১৯৫০-এর দশকেই। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে খাপ খেতে চলচ্চিত্রের প্রায়
৫০ বছরের মত সময় লেগেছে।[৩] ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৮০টির মত পূর্ণদৈর্ঘ্য
চলচ্চিত্র মুক্তি পেতো।[৪] আর ২০০৪ সালের হিসাব মতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে বছরে
গড়ে প্রায় ১০০টির মত চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।[৫] তবে ২০০৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সিনেমা
মুক্তির সংখ্যা কমে যেতে থাকে। ২০০৭ সালের ১/১১’র পর সরকারের অশ্লিলতা বিরোধী ট্রাস্কফোর্স
গঠন এবং অভিযানের পর পাইরেসি ও কাটপিস কমলেও কমে গেছে সিনেমা মুক্তির সংখ্যাও। বর্তমানে
গড়ে ৩০-৪০টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে প্রতিবছর। যা এই শিল্পের জন্য হুমকী।
একটা সময় দেখা যেত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে নকল করে
কলকাতার চলচ্চিত্রে সিনেমা নির্মান করা হত। তবে বেদের মেয়ে জোছনা ও বাবা কেন চাকরের
পর টলিগঞ্জের সিনেমা পাড়ায় বাংলাদেশের ছবির রিমেক আর তেমন একটা দেখা যায়নি। এর কারন
হচ্ছে টালিগঞ্জ বাংলাদেশি সিনেমার পরিবর্তে বলিউড ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সিনেমা
রিমেকের প্রতি মননিবেশ করে। এছাড়াও ৯০’র পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের সিনেমার মানও ক্রমান্বয়ে
অবধমিত হতে থাকে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর নব্বইয়ের আগ পর্যন্ত সময়টিকে
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের স্বর্ণযুগ বলা হয়। একের পর এক ব্যবসায়িক সফল সিনেমার নির্মাণ
হয় এসময়ে। কিন্তু নব্বয়ের দশকের মধ্যভাগের পর থেকে এদেশের চলচ্চিত্রের অবনতি ঘটতে থাকে।
এসময়ে পাইরেসি, বিদেশি ছবির নকল ও অশ্লিলতার কারনে হলগুলোতে দর্শক খড়া শুরু হয়। যা
বর্তমান সময়েও বলবত রয়েছে। তবে বর্তমানে কিছু কিছু ভাল ছবির নির্মানের কারনে দর্শকদের
হলমুখো হওয়াটাকে ইতিবাচক ভাবা যায়।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারনেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে
সঙ্কটে পড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই
শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন ও ফাহমিদুল হক তাদের এক গবেষণা নিবন্ধে লিখেছেন, “পরপর তিনটি
প্রাযুক্তিক আঘাত ঢালিউডকে পঙ্গু করেছে।...প্রথমে ভিসিআর-ভিসিপি, এরপর স্যাটেলাইট এবং
বর্তমানে সিডি-ভিসিডি ও মোবাইল ডিভাইস।”[৬] এসব প্রযুক্তির কারনে বাংলা চলচ্চিত্রের
পাইরেসি রেড়ে যায়। যার ফলে হুমকীর মুখে পড়েছে এই শিল্প।
অপর্যাপ্ত বাজেট, অদক্ষ কলা-কৌশলী, অতিঅভিনয়, অপ্রাসঙ্গিক
কাহিনী ও চিত্রনাট্যের দুর্বলতার কারনে বাংলা চলচ্চিত্র আজ হুমকির মুখে। এমন নানাবিধ
সংকটেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন এগিয়ে চলেছে। সংকটের ফলপ্রসু সমাধান হলে এ শিল্পটি
আশানুরূপ ফল বয়ে আনতে সক্ষম।
৩. পদ্ধতিঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতা নিয়ে এই পর্যালোচনাপত্রটি
তৈরী করা হয়েছে মূলত বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২”
এবং কলকাতার একটি শৈল্পিক ধাঁচের সিনেমা “বেলাশেষে” পর্যাবেক্ষণের মাধ্যমে। দুই বাংলার
দুইটি চলচ্চিত্র পর্যালোচনার মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের সামগ্রিক আলোচনার করতঃ একটি
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্ভাবনাসহ
বিভিন্ন বিষয় ফুটিয়ে তোলা হবে। যার মাধ্যমে এ ক্ষেত্রটির আগামী দিনের পাথেয় চিত্রিত
হবে বলে আমার বিশ্বাস।
৪. উদ্দেশ্যঃ
এই পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের বিষয় হচ্ছে, “দুইটি
বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক র্পযালোচনা।” এ জাতীয় আলোচনার মৌল উদ্দেশ্য
হচ্ছে, দুই বাংলার দুইটি আলোচিত সিনেমা পর্যালোচনা করার মাধ্যমে বাংলা তথা বাংলাদেশের
সিনেমার সংকটের ধরন চিহ্নিত করা এবং তার সমাধান খোঁজ করা। যা সংশ্লিষ্টদের সঠিক দিক
নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের আলোকবর্তিকা হবে।
৫. পূর্বানুমাঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কোলকাতার টালিউডের চেয়ে সমৃদ্ধ।
এখানকার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা একাডেমিক এবং কার্যকর ক্ষেত্রে দক্ষ। দেশসেরা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ
বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা চালু
আছে বাংলাদেশে। যার ফলশ্রুতিতে প্রশিক্ষিত লোকবলের মাধ্যমে এদেশের চলচ্চিত্র জগতের
বিস্তৃতির ব্যাপকতা পেয়েছে।
বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের লক্ষ্য বাণিজ্য হলেও
তা মূল উদ্দেশ্য নয়; দেশ,সমাজ ও প্রজন্মের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে শৈল্পিক
ছবির মূল উদ্দেশ্য সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে আনা হলেও বাণিজ্যও এর উদ্দেশ্য। তবে তা
গণসংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হতে পারেনি। প্রভাবের দিক থেকে এই দুইটি ধারার মধ্যে বাণিজ্যিক
ধারার ছবি সমাজে প্রভাবশালি বেশি।
৬. তাত্ত্বিক কাঠামোঃ
সোসাইটিতে ফিল্ম অ্যাজ অ্যা টুল, সেটা দিয়ে সোসাইটির
অসঙ্গতির নানারকম ডাইমেনশন তুলে ধরা সম্ভব। আলোচ্য প্রবন্ধে দুই ধরনের চলচ্চিত্রের
(Film) কথা আলোচিত হয়েছে, যেটা ইটসেল্ফ একটা ক্রিটিসিজম
ম্যাটেরিয়াল হিসেবে আমরা প্রোডিউস করতে পারি। কিন্তু আরেক ধরনের চলচ্চিত্র, যেটা অ্যানালিসিস
করা সবচেয়ে বেশি জরুর হয়ে উঠেছে আমাদের জন্য, সেটা হলো যে অ্যাজ অ্যা কালচারাল প্রোডাক্ট...কালচারাল
পণ্য কিসের জন্য তৈরি হয়? ফর মার্কেট কনজামশন, ফর প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি। নানারকমের
কালচারাল প্রোডাক্ট তৈরি হয়, এগজিস্টিং পাওয়ার রিলেশন টিকিয়ে রাখার জন্য যে ফিল্মগুলো
তৈরি হয়, সেই ফিল্মের ক্রিটিক করাটা দরকার। এখানে আমি দুই রকমের ফিল্মের কথা বলছিলাম।
এক ধরনের ফিল্ম দিয়ে আমি ক্রিটিক করতে পারছি; আর কিছু ফিল্ম আমাদের জন্য ক্রিটিক করা
অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তার মানে, পরিচালক যা বলতেছে, সেই বলাটাকে ভিন্ন একটা বলা দিয়ে
খারিজ করা, চ্যালেঞ্জ করা, কাউন্টার আর্গুমেন্ট তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়ে।[৭]
চলচ্চিত্রকে বিশ্লেষণ করতে
গিয়ে আমরা কখনো চলচ্চিত্রবিষয়ক তত্ত্বের আশ্রয় নিতে পারি, আবার সরাসরি চলচ্চিত্রের
গুণাগুণ বিচার করে সমালোচনা লিখতে পারি। রিচার্ড বারসামের (বারসাম, ২০০৭) মতে, চলচ্চিত্র
তত্ত্ব হলো বিশেষ কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক বা আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে চলচ্চিত্রকে বিশ্লেষণ
করা। আর চলচ্চিত্র সমালোচনা সাধারণত চলচ্চিত্রের শৈল্পিক মান ও দর্শকের প্রতি আবেদনের
বিশ্লেণের ওপর আলোকপাত করে।
চলচ্চিত্র লিখিতভাবে পাঠ
হয় চার উপায়ে: স্ক্রিনিং রিপোর্ট, মুভি রিভিউ, তাত্ত্বিক প্রবন্ধ ও ক্রিটিকাল প্রবন্ধ।
প্রথম দুটিকে আমরা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট-রিভিউ বলতে পারি। পরের দুটিকে আমরা
বলতে পারি গবেষকের ও সমালোচকের কাজ।[৮]
আলোচনার সুবিধার্থে লিখিত
উপায়ে চলচ্চিত্রপাঠকে আমি তিনভাবে বর্ণনা করতে চাই: রিভিউ, সমালোচনা ও গবেষণা।[৯] চলচ্চিত্র
সংস্কৃতির বিকাশে এই তিন ধরনের পাঠই প্রয়োজনীয়। পত্রিকার রিভিউ একটি চলচ্চিত্রকে দর্শকের
কাছে পরিচিত করে তোলে।
সমালোচনাত্মক প্রবন্ধ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের
মাধ্যমে দর্শক ও পরিচালকের মধ্যে একটা কার্যকর যোগসূত্র স্থাপন করে। আর তাত্ত্বিক গবেষণা
নানান প্রেক্ষাপটে (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, জঁরা অনুযায়ী, নির্মাতা অনুযায়ী, বিষয় ও
আঙ্গিক অনুযায়ী, জাতীয় চলচ্চিত্রের ধারণা অনুযায়ী ইত্যাদি) ফেলে চলচ্চিত্রের গভীর সমাজতাত্ত্বিক
অনুসন্ধান করে। চলচ্চিত্র স¤পর্কে
দর্শকের ধ্যান-ধারণার উন্নয়নে চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখালেখি বা বিশ্লেষণের একটি ভূমিকা
থাকতে পারে।
৭. উপাত্ত বিশ্লেষণঃ
এই গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের
আলোচিত ছবি “পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২” এবং ভারতীয় বাংলাছবি “বেলাশেষে” আলোচনা করা
হয়েছে। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২’ -এ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান
এবং নায়িকা জয়া আহসান অভিনয় করেছেন।
অন্যদিকে ‘বেলাশেষে’ আক্ষরিক
অর্থে কোন নায়ক-নায়িকা অভিনয় করেননি। তবে ভারতের ‘পদ্মভূষণ’ পুরষ্কার পাওয়া অভিনেতা
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছেন। তারা দুইজন প্রায় ২০ বছর
পর এক সঙ্গে অভিনয় করেছেন।
৭.১.১ পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২ঃ
“সারা বিশ্বে সিনেমাপ্রেমী
বেশি না কি ক্রীড়াপ্রেমী বেশি” যদি এই নিয়ে জরিপ করা হয়, তবে সিনেমাপ্রেমীদের সংখ্যা
ক্রীড়াপ্রেমীদের ধারে কাছেও আসতে পারবে না বলে বিশ^াস। এই বিপুল সংখ্যক ক্রীড়াপ্রেমীদের
সিনেমার দিকে টেনে আনার কৌশল হিসেবে চিত্রকারগণ তাদের সিনেমাতে খেলাধুলার একটা বড় অংশ
রাখা বা খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গোটা সিনেমাটা নির্মাণ করার প্রয়াস পেয়ে থাকেন।
প্রেম-বিরহ, মার-কাট ভিত্তিক
চলচ্চিত্রের ভীরে এদেশে খেলাধূলা বিষয়ক সিনেমা খুব একটা নির্মিত হয়ে উঠেনি। বিশ্বের
অন্যান্য দেশে খেলাধুলা ভিত্তিক বহু পূর্ণাঙ্গ সিনেমা নির্মিত হলেও আমাদের দেশে খেলাধুলাভিত্তিক
পূর্ণাঙ্গ সিনেমার সংখ্যা মাত্র ১টি (জাগো-২০১০)। আর বাকি যেসকল সিনেমাতে খেলাধুলার
অংশ আছে সেগুলো ফুটেজ জুড়িয়ে দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২
সিনেমাটি সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ঘাটতি পূরণে সক্ষম হয়েছে। এটিতে শুরু থেকে শেষ পযন্ত
ক্রিকেটের আবহ রয়েছে, তবে এটা স¤পূর্ণ
খেলাধুলার ভিত্তিক মুভি না। পরতে পরতে রোমান্টিক আবহ একে আচ্ছন্ন করেছে।
এতে দেখা যায়, জাতীয় ক্রিকেট
দলের খেলোয়ার আসাদ আহমেদ (শাকিব খান)। হটাৎ করেই হারিয়ে ফেলেছেন ফর্ম। এর পেছনে কি
ই বা রহস্য। কোন মানসিক চাপ, না অন্য কিছু? এর জন্যই সাংবাদিক জ.ই মামুনের একটি টক
শোতে আমন্ত্রিত হয়েছে শিল্পি আসিফ আকবর এবং সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমন। শিল্পি
আসিফ আকবর বলা শুরু করে, কি হয়েছে আসাদের সাথে। আসাদ মডেল মিতুর (জযা আহসান) প্রেমে
পড়ে। কিন্তু মিতুকে ভালোবাসে আরেক ক্রিকেটার রায়ানও (ইমন)। তাহলে? রায়ান কি পারবে জোর
করে আসাদের বুক থেকে মিতুকে কেড়ে নিতে? অপরদিকে রায়ানের কাছে প্রস্তাব আসে, পাকিস্তানের
বিপক্ষে ম্যাচ ফিক্সিং করতে। অফারটা অনেক বড়। ১০০ কোটি টাকার। রায়ান কি টাকার কাছে
নিজের মনুষ্যত্বকে বিক্রি করে দিবে?
এভাবেই এগিয়েছে গল্প। ত্রিভুজ
প্রেম ও দেশ প্রেমের গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে এই মুভি। বিরতির আগের টুইস্ট সবাইকে
দ্বিতীয়ার্ধ দেখার জন্য বসিয়ে রাখবে।
৭.১.২ সমালোচনাঃ
ক্রিকেট নিয়ে প্রথমবারেরমত
বাংলাদেশে ছবি নির্মিত হয়েছে এবং যার প্রথম পার্ট পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী অনেক হিট
হয়েছিল। তাই পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২ ছবি নিয়ে আগ্রহ ছিল। যদিও প্রথম বারের থেকে
এবারের গল্প পুরাটাই অন্যরকম।
‘পূর্ণদৈর্ঘ প্রেমকাহিনী-১’
-এর মত এটিও একটি মৌলিক গল্পের সিনেমা। কারণ কাহিনী এবং সংলাপ লিখেছেন রুম্মান রশিদ
খান। তার লেখার সুখ্যাতির আছে। শাকিব ক্রিকেটার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। জয়া অভিনয় করেছেন
মডেল চরিত্রে। জয়ার বিপরীতে শাকিব ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইমন। উঠতি সময়ের নায়িকা মৌসুমী
হামিদও প্রথমবারের মত শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়
করেছেন ওমর সানি, সাদেক বাচ্চু, শহীদুল আলম সাচ্চু, শিরিন বকুল, বীর জাদা, গুলশান আরা,
ফারদিন মাহিসহ আরো অনেকে। এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় দেখা যাবে সঙ্গীতশিল্পী
আসিফ আকবর, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন এবং সংবাদিক জ.ই. মামুনকে।
ছবিটি পরিচালনা করছেন সাফিউদ্দিন সাফি।
ছবি শুরু হয় সাংবাদিক জ.ই
মামুনের উপস্থাপনায় সঙ্গিত শিল্পী আসিফ ও সাবেক ক্রিকেটের হাবিবুল বাশারের অংশ নেয়া
একটি টক শো’র মাধ্যমে। ক্রিকেট নিয়ে টক শো, সেখানে ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলাপ যা একটু খটকা
লাগায়!
মামুন শুরুতেই জানালেন
অধিনায়ক ভাল করছে না। তার কোন ফিফটি বা সেঞ্চুরী নেই। তার দলে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা
হচ্ছে। আলোচনা যাওয়ার আগে সেদিনের খেলার হাইলাইটের অংশ দেখানো হয়। সেখানে দেখা যায়
শাকিব ৫৫ করে আউট হয়েছে। অথচ উপস্থাপক অভিযেগ করেছিলেন তিনি কোন ফিফটি বা সেঞ্চুরী
করতে পারছেন না!
এরপর শুরু হলো শাকিবের
একান্ত ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলোচনা। তার উপর ক্রিকেটের হাইলাইটস-এ মিড ফ্রেমে পুরোটা,
যা আধুনিক যুগে অকল্পনীয়!
প্রাকটিস শেষে শাকিব বের
হচ্ছে। তার কাঁধে থাকবে ক্রিকেটের কিটস ব্যাগ। সেখানে তার কাধেঁ দেয়া হয়েছে ক্যামেরার
ট্রাইপডের ব্যাগ আর অন্য হাতে একটা সাধারণ ব্যাট। কিন্তু মারপিটের দৃশ্যে দেখা গেল
সে ব্যাটটি হয়ে গেছে ৫/৭ ঢেউ দেয়া মুগোর!
অন্য একটি দৃশ্যে দেখা
যায়, নায়ক আসাদ আহমেদ (শাকিব খান) প্রাকটিস করছেন। নায়িকা মিতু (জয়া) আসলো শাকিবের
প্রাকটিস ম্যাচ দেখার জন্য। কিন্তু দেখানো হল শাকিবরা নেটে প্রাকটিস করছে, তাও আবার
নেটের ভেতর ৩/৪ জন ফিল্ডার।
সিনেমায় কেবল জার্সি এবং
স্ট্যা¤প এক রঙের হওয়াতেই গরমিল
নয়, বরং ব্যাটিং চলাকালিন সময়ে ক্রিজের দুই প্রান্তের দুই ব্যাটস ম্যানের প্যাডের দুই
রংয়ের দৃশ্যটি যে কারো চোখেই ধরা খাবে।
যদিও ক্রিকেট নিয়ে ছবিটিতে
ক্রিকেটের সব কিছু মিলিয়ে উপস্থাপন ফুটো উঠেনি। তাছাড়া সংশ্লিস্টদের ক্রিকেটিয় জ্ঞানও
প্রশ্নবিদ্ধ। তবুও সব মিলিয়ে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২’ ছবিটিকে স্বার্থক বলা যায়।
৭.২.১ বেলাশেষেঃ
স্বামি শুয়ে শুয়ে মোবাইল
টিপছে। খাটের অন্যপাশে বসে পারিবারিক এ্যালবাম দেখা শেষ করে স্ত্রী এখন শুতে যাচ্ছে।
এ সময় হঠাৎ সে স্বামিকে বলে উঠলো, ‘‘তুই খেয়াল করেছিস পিলু, আমরা আজ-কাল কথা বলিনা।
we no longer, connect with other
আমরা এত সোস্যাল নেটওয়ার্ক করি, অথচ এই
বেড রুমে আমাদের দুইজনের মধ্যে কোন নেটওয়ার্ক নেই। বাবা ঠিকই বলেছিল, ঐ স্পর্শটা না
দরকার হয়। আজকালতো হয় আমরা কথা বলি না আর or else we just make love সধশব ষড়াব আদর করা হয়ে যায়, তুই উল্টো
দিকে ফিরে ঘুমিয়ে পরিস, আমি আবার একা হয়ে যাই...।” কথাগুলো কলকাতার জনপ্রিয় আর্টফিল্ম
‘বেলাশেষের’ অংশবিশেষ। তরুণ একটি যুগলের এই কথাগুলো বর্তমান সমাজের একটি প্রতিচিত্র।
যার শুরু হয়েছে তাদের বাবা-মায়ের ডিভোর্স অধ্যায় শুরুর মাধ্যমে। ‘বেলাশেষে’ শৈল্পিক ধাঁচের একটি পারিবারিক চলচ্চিত্র।
এটি ২০১৫ সালে কলকাতার বিভিন্ন সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া হয়। এই সিনেমায় মূল চরিত্রে
অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অন্যান্যদের মধ্যে
ছিলেন, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, মনামি ঘোষ, খরাজ মুখোপাধ্যায়,
সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
সিনেমাটির পরিচালনা করেন নন্দিতা রায় ও
শিবপ্রসাদ মুখার্জী। চিত্রনাট্য পরিচালনা করেছেন, নন্দিতা রায়। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন,
অনুপম রয় ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় পরিবারের কর্তা বিশ্বনাথ
মজুমদার (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ঠিক করেন তার ৪৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানবেন।
পূজার আনন্দঘন মুহুর্তে পরিবারের সবাইকে জড়ো করে জানান যে স্ত্রী আরতির (স্বাতীলেখা
সেনগুপ্ত) সাথে তার বৈবাহিক স¤পর্কের ইতি টানতে চান এবং তিনি আইনি সব ব্যাবস্থা করে রেখেছেন। ঝড় ওঠে
পরিবারের বাকি সদস্যের মধ্যে। অতঃপর আইনি নোটিশে জানায় ১৫ দিন একসঙ্গে থাকতে হবে বিশ্বনাথ
মজুমদার ও আরতিকে। এই সময়ের মধ্যেই ফুটে ওঠে বর্তমান সময়ের স্বামী-স্ত্রীদের চেপে থাকা
রাগ-অনুরাগগুলো যা এক সময়ে ক্ষোভের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
বাবা-মায়ের রুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে
তাদের মধ্যকার দুরত্বের কারন অনুসন্ধান করার চেষ্টা চালায়। এখানেই তারা জানতে পারে
জীবন দর্শন। এখান থেকে তারা আবিষ্কার করতে পারে নিজেদের জীবনের বাস্তবাতা। যেখান থেকে
তারা নিজেরা শিক্ষা নিয়ে দূরত্বের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
বেলাশেষে, প্রকৃত অর্থে দাড়ায় দিনের শেষ
সময়টুকুতে। আর এই সিনেমায় রূপক অর্থে বোঝানো হয়েছে জীবনের শেষ মূহূর্তের সময় গুলোকে।
৪৯ বছর দা¤পত্য জীবন পার করার পরও বিশ্বনাথ মজুমদারের ভিতরে হতাশা ,পাওয়া-না পাওয়া
, একাকীত্ব কাজ করছিলো। স¤পর্কের কোন আবেদন খোঁজে পাচ্ছিলনা সে। কিন্তু ১৫ দিন সময় তারা নিজেদের
কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেন। খোঁজে পায় স¤পর্কের নতুন সংজ্ঞা।
সিনেমায় আদালতে বিশ্বনাথ মজুমদার ও বিচারপতির
মধ্যকার কথোপকথনের কিছু অংশ ছিল এই রকম,-
-বিশ্বনাথ বাবু,আপনারা একসাথে সহবাস করেন?
(শারীরিক স¤পর্ক নয়)
-হ্যা, এক ছাদের তলে কিন্তু এক ঘরে না।
-শেষ কবে একসাথে রেস্তোরায় খেতে গেছেন?
-মনে পরে না।
-শেষ কবে একসাথে প্রাতঃভ্রমনে বের হয়েছেন?
কখনো সূর্যোদয় দেখেছেন একসাথে?
-আমি তো মর্নিং ওয়াক করি কিন্তু এক সাথে
না।
-ইদানিং কোথাও বেড়াতে গেছেন?
-না।
-রোজ ¯পর্শ করেন আপনার স্ত্রীকে? যৌন
¯পর্শ নয়, সি¤পল টাচ? একটা হাতে আরেকটি হাত রাখা।
-না
-একসাথে ফুসকা খান?
-না, হয়ে ওঠে নি।
এই কথোপকথনটি গভীরভাবে অনুধাবন করলেই সিনেমাটির
কনসেপ্ট স¤পর্কে ধারনা করা যায়।
সিনেমাটির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন
সাংসারিক টানাপোড়েন, একে অপর কে নতুন করে আবিস্কার করা, মমতা, বিশ্বাস, অভিমান, ভালবাসা,
নির্ভরশীলতা ইত্যাদি বিষয় গুলো। প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীর একসাথে এই মুভিটি দেখা উচিত,
নিশ্চিত বলতে পারি এই সিনেমাটি দেখার পরে তাদের স¤পর্ক আরো মধুর ও নতুন ভাবনা জাগাবে
নিজেদের স¤পর্কে।
৭.২.২ সমালোচনা
বর্তমান সময়ের ভঙ্গুরোমান দাম্পত্য জীবনের
জন্য এই সিনেমাটি এইটি শিক্ষনীয় বার্তা বহন করতে সক্ষম। এর কাহিনী, চিত্রনাট্য, গ্রাফিক্স
ছিল অসাধারণ। শিল্পীদের অভিনয়ও ছিল প্রশংসনীয়।
তবে ‘বেলাশেষে’ সিনেমাটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটি
হচ্ছে, এটি কোন মৌলিক গল্পের চলচ্চিত্র নয়। এ স¤পর্কে সিনেমাটির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার
নন্দিতা রায় বলেন “আমরা একটা নাটক দেখেছিলাম ‘বেলাশেষে কোলাহল’ নামে। সেই নাটকের কনসেপ্টটা
খুব ভাল লেগেছিল আমার। সেখান থেকে থিমটা তুলে নিয়ে একদম অন্য গল্প তৈরি করলাম। আর আমরা
সৌমিত্রদা (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়), স্বাতীলেখাদির (স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত) কথা মাথায়
রেখেই স্ক্রিপ্টটা লিখেছিলাম। ‘বেলাশেষে কোলাহল’ নাটকে আরতির চরিত্রটা করতেন স্বাতীদি
নিজেই। স্বাভাবিক ভাবেই ওঁকে ছবিটাতে নেওয়া হয়েছে।”[৯] সুতরাং বোঝায় যাচ্ছে এটি আক্ষরিক
অর্থে কোন মৌলিক গল্প নয়।
এছাড়া কাহিনীর জন্য সন্তানেরা বাবা-মা’র
ঘরে গোপন ক্যামেরা সংযোগ লাগানোটা সমালোচনার দাবী রাখে। মানুষের একান্ত কিছু জায়গা
থাকে। যা কেবলই তাদের ব্যক্তিগত। এখানে সেটা লংঘন করা হয়েছে। তাছাড়া আদালতে কিছু ডায়ালগ
রয়েছে, যা অন্যভাবেও করা যেত।
দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দেয়ার
পর মেঝ মেয়ে মিলি (ঋতুপর্ণা) তার বাবা বিশ্বনাথ মজুমদারকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) উত্তপ্ত
হয়ে কিছু কথা বলেছে, তা সাধারণতা কোন সন্তান তার বাবাকে বলতে পারেনা। মাকে ভোগ করা,
সুবিধা নেয়া, স্বার্থপরসহ শব্দগুলো এড়িয়ে অন্যভাবেও বলা যেত।
আবার ছোট মেয়ে পিউ তার স্বামী পিলুকে
‘তুই’ সম্বধোন করাটা সমাজের রিতী-নীতি ও সংস্কৃতির সাথে মেলে না।
ছোটখাট দুয়েকটি ভুল ছাড়া ‘বেলাশেষে’ সিনেমাটি
সবমিলিয়ে একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র। বর্তমান সময়ে সমাজকে দেয়ার মত অনেক কিছুই আছে এই
সিনেমাটিতে।
৮. তুলনামূলক বিশ্লষণ ঃ
যদিও এই নিবন্ধে আলোচ্য সিনেমা দুইটির
একটি বাণিজ্য ধারার এবং অন্যটি শৈল্পিক ক্যাটাগড়ি পর্যায়ের। তবুও এই দুইটি ধারার দুইটি
ছবি পর্যালোচনার মাধ্যমে আমরা দুই বাংলার সিনেমা
জগতের কিছুটা আবহ আলোকপাত করতে পেরেছি। বাণিজ্য ধারার
যে সিনেমাটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে তা অনেকটাই ব্যার্থ চলচ্চিত্র হিসেবে পরিগণিত
হয়েছে বলে মনে করি। অপর দিকে শৈল্পিক ধাঁচের ‘বেলাশেষে’ ছবিটি কলকাতার প্রতিনিধিত্ব
বেশ সফলতার সাথেই করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও এর কাহিনী অনেকটাই কল্পকাহিনী। তবে
এতে দুই প্রজন্মের চিত্রায়না প্রশংশিত হয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়ের বেডরুমে গোপন ক্যামেরা
সংযোগটির কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল সেটার সমালোচনার দাবী রাখে।
একটা ফিল্ম একটা আর্গুমেন্ট দেয়, একটা
ইন্টারপ্রিটেশন দেয়, একটা ব্যাখ্যা দেয়; সার্টেইন রিয়ালিটি কিংবা সোসাইটির কোনো কোনো
রিয়ালিটির একটা ব্যাখ্যা দেয়। তো সেই ব্যাখ্যাকে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে আরো সম্ভাবনাময়
করে তুলতে হয়। ফিল্ম কী করে, ফিল্ম হচ্ছে ডিরেক্টর ডমিনেটেড একটা শিল্প; তো ডিরেক্টরের
একটা গেইজ থাকে, একটা দেখার চোখ থাকে, সে কী করে, সেই চোখ দিয়ে ভিউয়ারের একটা চোখ নির্মাণ
করে। ডিরেক্টর চায়, লোকজন এই ফিল্মটা এই ভাবে দেখবে। এখন ফিল্ম ক্রিটিসিজমের একটা কাজ
হতে পারে, যে দেখার চোখটা ডিরেক্টর নির্মাণ করে দিচ্ছেন, যা দেখতে বলতেছেন, সেই জায়গা
থেকে ভিন্ন ইন্টারপ্রিটেশন দিয়ে, দর্শকদের ভিন্ন জায়গাটা তৈরি করা।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের কথা
মতে আমরা যদি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী-২”
-এর পর্যালোচনা করি, তবে বলতে হবে এটি ডিরেক্টর বা পরিচালকের খাম খেয়ালীপনার একটি ফিল্ম
মনে হবে। কারন এই ছবিটির বিষয়বস্তুর সাথে চিত্রনাট্যের কোন ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়না।
তাছাড়াও এক ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে এই চলচ্চিত্রে। বাংলাদেশের জনগণের ক্রিকেটীয়
আবেগকে পুঁজি করে অসাধু ব্যাবসায়ীদের মত ব্যবসা করে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্য ছিল বৈকি এই
ফিল্ম সংশ্লিষ্টদের। তবে ছবিটির মেকাআপ, গেটাআপ ও গ্রাফিক্স বেশ ভাল হয়েছে। যেটি এই
শিল্পের জন্য ইতিবাচক। এছাড়াও এই ফিল্মের মাধ্যমে দেশপ্রেমের প্রতি তারুণ্যের আকর্ষণ
বাড়াতে এটি সহায়ক হবে। কারন ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয়তা পাবার সাথে সাথে ম্যাচ পিক্সিংয়ের
বিষয়টি আলোচিত ইস্যু বর্তমান। বিশেষ করে বিপিএলে কিছু খেলোয়ারের পিক্সিং জাতীয় অঙ্গনে
কালিমা লেপন করেছে। সে অর্থে এই ছবিটি সাধূবাদ পেতে পারে। তবে সেখানে খেলোয়ারদের আরো
পেশাদারিত্ব ফুটিয়ে তোলা যেতে পারতো।
অন্যদিকে টালিউডের ‘বেলাশেষে’ ছবিটি পারিবারিক
বিষয়াদি ফুটে উঠেছে। যদিও উপমাহাদেশে বিশেষ করে বাঙ্গালি সমাজে বয়ষ্কদের মাঝে বিবাহ
বিচ্চেদের হার অনুল্ল্যেখযোগ্য। বলা যেতে পারে, তাদের মাঝে এ বিষয়টির চর্চা ও চিন্তা
তেমন একটা ঘটেনা। এটি মূলত পশ্চিমাদের জীবনে ঘটে থাকে। তাই ফিল্মটি সমাজে অতটা প্রভাব
(Effect) ফেলবে বলে মনে হচ্ছেনা। তবে, এটি স্বামী-স্ত্রী আবেগ
ও অনুরাগের বিষয়টি তুলে আনাকে সাধুবাদ দিতে হবে। কারন এসব বিষয় থেকেই মূলত বৈবাহিক
জীবনের দূরত্ব তৈরী করে। তাই এই বিষয়টি তরুণ-তরুনীদের জন্যও শিক্ষনীয় বটে।
তুলনামূলক বিশ্লেষণের বিষয়টি
আলোচনা করলে বলতে হয়, টালিউডের চেয়ে ঢালিউডের সিনেমাপাড়া অনেকটাই পিছিয়ে আছে। কলকাতার
দর্শকদের হলে টেনে নেয়ার মত উপকরণ সেখানে থাকলেও বাংলাদেশীদের হলে নেয়ার মত প্রভাবক
এদেশের চলচ্চিত্রে ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে পরিচালকদের যোগ্যতা, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের
শৈলীতা ও পারদর্শিতা এবং সর্বপরি গল্প ও চিত্রনাট্যের স্বাতন্ত্রতা ও সৃষ্টিশীলতা কলকাতার
কৈশলীদের তুলনায় বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশ অভাব রয়েছে।
৯. সুপারিশঃ
বর্ণিল সোনালী অতীত বহনকারি
বাংলা চলচ্চিত্র বর্তমান পশ্চাৎপসারণমান। ক্রমেই সেটি পিছিয়ে পড়ছে। গতশতকের শেষ দশক
থেকে এদেশে হাতে গনা কয়েকটি সিনেমা ব্যতিত উল্লেখযোগ্য কোন চলচ্চিত্র তৈরী হয়নি; যা
আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কোলকাতার সিনেমার দশা
এক হলেও তারা দিন দিন উন্নতি করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। অথচ ভাল
চলচ্চিত্রর নির্মাণ হলে বাংলা ছায়াছবির প্রচুর দর্শক রয়েছে। যার প্রমাণ সাম্প্রতিক
সময়ের ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি। তাই উল্লেখিত দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও
তুলনামূলক পর্যালোচনা করার মাধ্যমে আমি নি¤েœাক্ত সুপারিশমালা উপস্থাপন করছি। যার মাধ্যমে বাংলা
চলচ্চিত্র তার কাঙ্খিতমান অর্জন করতে পারবেবলে আমার বিশ^াস।
১. শক্তিশালি ও জবাবদিহীমূলক সেন্সরবোর্ড গঠন,
২. অভিজ্ঞ কলাকৌশলী,
৩. মান সম্মত অভিনেতা-অভিনেত্রী,
৪. উন্নত ও বাস্তবধর্মী গল্পাবলম্বনে মৌলিক চিত্রনাট্য
নিশ্চিত করা,
৫. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা,
৬. আধুনিক ও বিশ^মানের সিনেমাহল,
৭. ডিজিটাল ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে
এক্ষেত্রে কৃত্রিমতা পরিহার করা,
৮. আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগীতার মানসিকতা,
৯. এফডিসির উন্নয়ন, এবাং
১০. প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্ধের ব্যবস্থা।
১০. উপসংহার ঃ
দুইটি বাংলা সিনেমা পর্যবেক্ষণ
ও তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক ধারার চলচ্চিত্রের মধ্যকার
পার্থক্য উল্ল্যেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান। দেশমাতৃকা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চেয়েও ব্যবসায়কে
প্রাধান্য দেয়া হয় বাণিজ্যিক ধারার ছায়াছবিতে। যার কারনে এসব সিনেমায় দ্বন্দ-সংঘাত
ও প্রেম-ভালোবাসা, শত্রুতা ও প্রতিশোধ স্পৃহাকে অবলম্বন করা হয়। দর্শকের কল্পজগতকে
সমৃদ্ধ করে এ ধরনের সিনেমা। তাই বিবেচনার বিচারে বাণিজ্যেক ধারার চলচ্চিত্রের দর্শকের
প্রচুর্যতা বেশি। অন্যদিকে শৈল্পিক ধাঁচের সিনেমাগুলো মূলত সামাজিক্য সংকট ও জীবনের
মূল্যবোধ কেন্দ্রীক কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়ে থাকে বলে এর দর্শকেরা হয়ে থাকেন নির্দিষ্ট
গন্ডির মধ্যে। কিন্তু বাণিজ্যিক ধারা চাইতে শৈল্পিক ধাঁচের সিনেমা সমাজে তুলনামূলক
প্রভাবকের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।
ফলাফল বিস্তারে দুই ধারার
চলচ্চিত্রকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও মূলত বাংলা চলচ্চিত্রের সব শাখাকেই
অভিন্ন সমস্যা ও বাধার সম্মুখিন হতে দেখা যায়। কারিগরি, অর্থনৈতিক ও প্রয়োজনীয় দক্ষ
কলা-কৌশলীর সংকটে পড়তে হয় এপার ও ওপার বাংলার চলচ্চিত্রকে। তবে এক্ষেত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম
দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কলকাতার তুলনায় অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। যা আমার পূর্বানুমানকে ভুল
প্রমাণিত করেছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. “Who’s Who of Victorian Cinema”। Hiralal
Sen । http://www.victorian-cinema.net/sen
২. নাসরীন,
গীতি আরা ও হক, ফাহমিদুল (২০০৮) । বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: সঙ্কটসূত্র ও উত্তরণপ্রকল্প।
যোগাযোগ। সংখ্য ১১: ডিসেম্বর ২০১৩।
৩. রাজু,
জাকির হোসেন। National cinema and the beginning of film history in/of Bangladesh
৪. বাংলাপিডিয়া (১ম সংস্করণ)। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
প্রথম সফটওয়্যার সংস্করণ, ভূমিকা অংশ।
৫. রোউহ, হেলেন (২০০৬)। Bangladeshis reject “smutty” Bengali films| AFP, ১৭ জুলাই ২০০৬
৬. হক, ফাহমিদুল ও নাসরীন, গীতি আরা (২০০৮)।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: সঙ্কটসূত্র ও উত্তরণপ্রকল্প। যোগাযোগ। সংখ্য ১১: ডিসেম্বর ২০১৩।
৭. মামুন, আ-আল (২০১৩)। প্রসঙ্গ চলচ্চিত্র সমালোচনা।
ম্যাজিক লণ্ঠন। সংখ্যা ৬, জানুয়ারি ২০১৪।
৮. করিগান, টিমোথি জে. (২০০৯) । A Short Guide to Writing About Film (6th ed.). New
Delhi: Pearson.
৯. হক, ফাহমিদুল (২০১৩) । ভূমিকা : চলচ্চিত্র
সমালোচনা কী ও কেন (১ম সংস্করণ)। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী।
১০. রহমান, হাবিব (২০১৬)। বেলাশেষে (২০১৫)” অ্যা
পিউর ফ্যামেলী ড্রামা ও স¤পর্কের
নতুন সংজ্ঞা!!। bioscopeblog.net/habib-rahman/47973|
Posted February 9, 2016 7:47pm BDT



মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন