সে বইটি পেলাম যেভাবে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ছিলেন ড. হাসান মোহাম্মাদ স্যার। সম্ভবত  রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁকে অনেক দিন দেখছি না। আগে নিয়মিত লেখতেন আর টক শো গুলোতে যেতেন। উনার লেখা খুব ভাল লাগতো, তাই পড়তাম সেই ছোটবেলাতেই।

আমার একটা 'বাজে' অভ্যাস আছে, কারো সাথে নিজ থেকে গিয়ে কথা বলতে পারি না। যত বড়ই হোক, আগে তিনি এসে কথা বললে তারপর আমি ইজি হতে পারি। এজন্যই আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, 'তোমার লেখার হাত ভাল, কিন্তু কমিনিউকেশনে গ্যাপের কারণে তোমার সোর্স ক্রিয়েটে সমস্যা হতে পারে। সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে এইটা বড় একটা গ্যাপ'😂

সম্ভবত ড. হাসান স্যারই প্রথম, যার সাথে আমি নিজে গিয়ে কথা বলেছি। অবশ্য লাভও হয়েছে। স্যারের লেখা সেই বইটা তিনি উপহার দিলেন। যেটা নাকি পক্ষ-বিপক্ষ উভয়ের কাছেই সমান সমালোচিত।

ছোটবেলায় অভ্যাস ছিল কোন রকমে ৫০/১০০ টাকা জমাতে পারলেই ঝাউতলা স্টেশন থেকে ট্রেনে চেপে বসতাম। তারপর চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমে নুপুর মার্কেট। সেই সময়ে এই টাকা দিয়েই অনেক ভাল ভাল বই পাওয়া যেত।

সেদিনও এরকম করেই শার্টলে চেপে নূপুর মার্কেট এলাম। বিদ্যাসাগরে ঢুকবো, দেখি তিনি। দুই হাতে দুইটা ব্যাগ আর দু'কাঁদে দুইটি। সবগুলোতেই বইয়ে ঠাঁসা।  তাকিয়ে থাকলাম কতক্ষণ। চোখাচোখি হতেই আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। চোখে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টি।

কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। বললাম স্যার আমি আপনাকে চিনি, আপনার লেখা পড়ি, গতকাল আপনাকে তৃতীয়মাত্রায় দেখলাম। একটা বই নিয়ে বলেছেন....

স্যার অবাক হয়ে বললেন, কী কর তুমি? বললাম ক্লাস এইটে পড়ি। তাই! বলে মাথায় হাত ভুলিয়ে তাঁর সেই বইটা বের করে আমাকে দিলেন।

সেদিন টকশোতে তিনি এই বইটির কথাই বলেছিলেন, ১/১১-এর পর যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটা মাত্র আলোচিত হচ্ছে। টিভি টকশো গুলোতে এইটা হট টক। এইরকম সময়ে তিনি চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রায় গিয়ে এই ইস্যু নিয়ে বলতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামের কথ বলার এক পর্যায়ে উনার লেখা 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নেতৃত্ব, সংগঠন ও আদর্শ' বইটির উদ্বৃতি দিয়েছিলেন।

তখন বইটির বিষয়ে বলেন, এইটা তার PhD Thesis এর টপিক। এর আগে দলটি নিয়ে কেউ গবেষণা করেনি। মজার বিষয় হচ্ছে, এইটা এমন এক বই, যেটা নিয়ে জামায়াতে ইসলাম যেমন প্রতিবাদ করেছে, তেমনি জামায়াত বিরোধীরাও সমালোচনা করেছে।

বই পেয়ে খুশিতে ডগমগ করে বাসায় চলে এলেও পরে আর পড়া হয়নি বইটা। প্রায় এক যুগ আগের কথা ভুলেই গেছিলাম।  আজ বুক শেল্পের পুরনো বই পরিষ্কার করতে গিয়ে পেলাম এইটা।  বইটা হাতে নিয়ে স্যারের কথা খুব মনে পড়ছে। উনার কী অবস্থা ক জানি না। অনেক দিন দেখি না, লেখাও পাই না।

উনাকে দেখেই এক সময়ে আমার অ্যাম্বিশন ছিল, পলিটিক্যাল সায়েন্সে পড়ার। জার্নালিজমের পরে এই সাবজেক্টে পড়ার চেষ্টাও করেছি অনেক😎

বইটি অনেক পুরনো ছিল। ছিড়ে গিয়ে কাভার নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও এইটা আমার কাছে অমূল্য। তবে দুই পৃষ্টা পড়তে গিয়ে আগামাথা কিছু মাথায় ঢুকছে না। রেখে দিলাম

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সীমাবদ্ধতাঃ দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা

কথাগুলো 'সাম্প্রদায়িক'

Coverage of Local Development Issues in Regional Newspaper of Chattogram