সতিনের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বই

এস.এস.সি পরীক্ষার পর বাসা থেকে টাকা দিল কম্পিউটার কেনার জন্য। আব্বা যেতে চাইল সাথে নিলাম না, বল্লাম বন্দুরা যাবে সাথে। সকালে নতুন এক আমেজ আর কল্পনার রাজ্যে চক আঁকতে আঁকতে বের হলাম কম্পিউটার ক্রয়ের লক্ষে। বেশী সময় লাগার কথা নয়, কারণ কনফিগারেশন সহ যাবতীয় কার্য মোটমুটি আগেই শেষ করা আছে। যাব, সেট আপ হবে এরপর নিয়ে আসবো।
রাস্তায় হঠাত কেন যে একটা ভূত ঢুকল বুঝলাম না, যার মাধ্যমে কিনবো তিনি বললেন দুপুর ১২ টায় আসবেন, তাই কিভাবে যেন আন্দরকিল্লা চলে গেলাম, আজও তার সমাধান পেলাম না। সেখানে গিয়ে বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে ফেল্লাম নিজেকে । কিন্তু শুরু করে দিলাম এক একটি গুরুত্বপূর্ণও ও প্রয়োজনীয় বই। এভবে একটি দুটি করে এক সাথে কিনে পেলেছি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টাকার বই! কারণ যে বইটাই দেখছি সেটাই প্রয়োজনীয় মনে করলাম।
বাসায় আসার পর সবাইতো অবাক! আম্মা ঘোষণা করলেন, বাসায় খাওয়া বন্ধ, আব্বা বলল্লেন বাসা থেকে বের হয়ে যেতে। কি আর করা নিজ রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলাম। বাসা হতে বের করে দেয়নাই বটে কিন্তু একদিন না খাইয়ে রেখেছে।
যাই হোক, পড়ে দেখলাম আব্বা আমার কিছু কিছু বই পড়ছেন, বই গুলো রাখার
জন্য সুন্দর একটি বুকসেল্প বানিয়ে দিয়েছেন।
পড়ে অবশ্য কম্পিউটার আমি নিজেই কিনেছি। এখন অবশ্য ডেক্স টপের পাশাপাশি ছোটবোনের হাজব্যান্ডের গিপ্ট করা লেপটপও আছে। আমায় এখন আর পায় কে? কারেন্ট নাই সমস্যা কি? ক্লশ নেই, বাসার বাহিরেও তেমন একটা বাহির হই না। দিনের ১২/১৩ ঘন্টা এখন কম্পিউটারের সামনে। বসতে বসতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেলে শুয়ে শুয়ে, তার পর বুকের ওপরে রেখে অবিরাম চলছে আমার ডিজিটালীয় দিনাতিপাত।
কিন্তু দুখের খবর, যে বইয়ের কারনে জীবনের প্রওথম থাপ্পর খাওয়া আম্মার হাতে, না খেয়ে একদিন অবরুদ্ধ নিজ ঘরে, সে বই আজ আমার সাথে অভিমান করে আছে। আজ থেকে দু বছর আগেও যেখানে দিনে শতশত পৃষ্ঠা বই পড়তাম, সেখানে এখন পুরো মাস মিলিয়েও ১০০ পৃষ্ঠা পড়া হয় না!!!
কম্পিউটারে কিন্তু পড়ার চেষ্টা করি। শত শত ডাউনলোড করা বই পড়ে আছে পিসিতে। কিন্তু বাস্তবে বই পড়া আর ডিজিটাল বই পড়াকি এক জিনিস??
যখন কোন রাতে যদি একটা বই নিয়ে শুতে যাই, অমনি ঐ ইলেকট্রনিক্স বস্তুটি ভিক্ষোভে পেটে পড়তে চায়। আমার হাতে বই থাকাকে যেন সে সামান্য টুকুও সহ্য করতে পারে না।
আমি বুঝি আমি ভূল করছি। কিন্তু কি করার! ওর রূপেতো আমি বিমোহীত। এসব যে ছলনা সেটা জান, তারপরও যেন আমার কিছুই করার নেই। চেষ্টা করেছি দু’টোকেই রুটিন করে ব্যবহার করবো্,সেটাও হচ্ছে না। 
http://www.sonarbangladesh.com/blog/ajobmanush/109106

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সীমাবদ্ধতাঃ দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা

কথাগুলো 'সাম্প্রদায়িক'

Coverage of Local Development Issues in Regional Newspaper of Chattogram