গুচ্ছ বসতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি
প্রায় দশ বছর পর গত এপ্রিল মাসে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বেশ ভালই কেটেছে গ্রাম্য জীবন। আসলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সবুজ প্রকৃতি, সরল প্রাণ ও অতিথী পরায়ন মানুষগুলোকে দেখে কার না ভাল লাগে। আমারও কেটেছে বেশ। তবে এই ভাল লাগার ভেতর একটি বিষয় আমাকে যেমনি করেছে হতাশ, তেমনি করেছে আতংকিত।
সেটি হচ্ছে, এবার গ্রামে গিয়ে রাস্তার আশে-পাশের যে কৃষি জমিগুলো আগে দেখে এসেছি সে গুলো উদ্ভেগজনকভাবে হারিয়ে গেছে। এক একটি জমি এখন এক একটি বাড়ি, একেকটি কলোনী। কোথাও টিনের কিংবাকোথাও বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে এক বাজে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে আবাদি জমিন ধ্বংসের।
গ্রামের প্রায় সবগুলো বাড়িতে রয়েছে একাধিক প্রবাসি। তাদের রক্ত ঝরা রেমিটেন্স শহরে যেমন ফ্লাট কিনে ব্যয় হয়, তেমনি গ্রামে খরচ হয় জমিন কিনে। যেটাতে এক সময়ে মণকে মণ ধান হত সেটাতে কিছুদিন ঘেরাও করে কিছু গাছ লাগানো হয়, দু'চার বছর পরে সেখানে ঘর বানিয়ে বাড়ি তৈরীর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এমনও দেখা গেছে, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি যুবকদেরকে নিজ বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে আগে যেখানে তারা চাষাবাদ করতো, সেখানে খড়ের একটি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেছে! কালের আবর্তে এই খরের ঘরটিই হবে অমুকের/তমুকের বাড়ি।
কচুয়া বীল, লক্ষ্মীপুরের সবচাইতে বড় ধান চাষের বীল গুলোর মধ্যে একটি (চর ব্যতিত)। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় কইচ্যা ঢগি। সভ্যতার প্রয়োজনে, হাজার হাজার মণ ধান আনা-নেয় এবং যাতায়াতের সহজিকরনের জন্য আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে এর মধ্যখান দিয়ে একটি রাস্তা তৈরী হয়। নাম হয় নতুন রাস্তা। দশ বছর আগে যখন এই রাস্তায় হাঁটতে গেছি, দেখেছিলাম এক লোক তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে বৌ নিয়ে রাস্তার পাশে তাদের একটি জমিতে বাড়ি বানিয়েছে। দশবছর পর আবার যখন সেখানে গেলাম, রাস্তার পাশের কোন জমিনই খালি দেখলাম না! সবগুলো বসতিতে পরিপূর্ণ।
| এভাবে ছোট একটি ঘর পরে একসময় একটি বাড়িতে রুপান্তর হচ্ছে কচুয়া বীলের জমিগুলো |
এমনিতেই আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ভূ-খন্ড কম, তার ওপর বর্তমানে যে হারে গুচ্ছ বসতির রেওয়াজ চালু হচ্ছে তাতে আজ থেকে ২০ বছর কিংবা পঞ্চাশ বছর পরে আমাদের কোন আবাদ যোগ্য ভূমি থাকবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ আছে।
এটি শুধু যে লক্ষ্মীপুরের একটিমাত্র গ্রামে হচ্ছে তা নয়, বরং পুরো বাংলাদেশ জুড়েই এই চিত্র দেখা যাবে তাই এখনও সময় আছে, সরকার যদি এমন আইন করে যে, কারো বসতি প্রয়োজন হলে বহুতল ঘর নির্মাণ করতে পারবে (গ্রামে দোতলা কিংবা তিনতলা করতে ইটবালির প্রয়োজন হয় না) কিন্তু গুচ্ছ কোন ফসলি জমিতে নয়। যদি আবাদি জমিনে বসতি নির্মাণের প্রয়োজন পরে তাহলে সরকারি অনুমতির প্রয়োজন হবে।
এছাড়া সরকার গুচ্ছ বসতিকে অনুৎসাহিত করা প্রয়োজন। এটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জরুরী।
আমি আমার উদ্ভেগের কথা ব্লগে লিখলাম, যদি সরকারের কারো কাছে একটু পৌঁছে তবেই সার্থকতা। তবে ব্লগে দিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিই মূখ্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন