জাতীয় শোক দিবসঃ শোক হয়ে উঠুক জাতীর সম্প্রীতির প্রতীক
১৯৯৭৫ সালের ১৫-ই আগস্ট, এই দিনের সূর্যটি বাংলার আকাশে অন্যান্য দিনের মত
সোনালী আভা নিয়ে উদিত হল না! প্রতিদিন যেখানে দিবাকর তার ঝলমলে কিরণ দিয়ে
পূর্বাকাশে সতেজ স্নিগ্ধ রেখা দিয়ে উদিত হয়ে মানুষের কাছে নিবেদন করে নতুন
দিনের; সেখানে এই দিন রবির উন্মেষ হয়েছে সত্য, কিন্তু সে মোটেও মিহির ছিল
না। শুভ্র প্রভাতেই সে যেন বাংলার আকাশে আদিত্য
হয়ে রক্তিম আভা মেখে দিয়েছে
চারিদিক।
দিবেই বা না কেন! তারই
বা কী দোষ!! তার উদয়নের পূর্বেইতো যার জন্য স্বাধীন জাতি হিসেবে বুক ফুলিয়ে চলার অধিকার
পেয়েছে তাকেই-তো রাজধানী ঢাকার নিজ বাসভবন ধানমন্ডীর ৩২ নম্বরে তার বুকের তাজা খুনে
সিড়িকে লাল রক্তের বন্যা বাসিয়ে দিয়েছে কিছু বিপদগামী।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম
নেয়া হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান, যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল তখন তিনি পাকিস্তানের কয়েদখানায় বন্দী
থাকলেও কার্যত তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা। তার অনুপস্থিতিই যেন রক্তের
ত্যাজ আরো বহু গুন বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলার প্রতিটি মানুষকে। শেখ মুজিবুর রহমান জেলে
থাকলেও হৃদয়ে ধারণ করে ঝাপিয়ে পড়া বাংলার বীর জনগণ মাত্র নয় মাসেই চিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার
লাল টকটকে সূর্যটি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের
শাসন ভার হাতে নিয়েই তিনি আত্ম মগ্ন হলেন নতুন দেশটিকে তার স্বপ্নে সোনার বাংলাদেশ
হিসেবে গড়ে তোলার কাজে। এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। প্রথমেই তিনি দেশেকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে
আত্ম নিয়োগ করলেন। এটি তার জন্য মোটেও সহজকাজ ছিল না। কারণ দেশ স্বাধীন হলেও তখনও স্বাধীনতার
পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে কার্যত দেশ দ্বিধা-বিভক্ত ছিল। তার উপর মুক্তি যোদ্ধারাও যে ঐক্য বদ্ধ
ছিল এমনটি নয়। ১৫-ই ডিসেম্বরের ক্শানিক পরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন
সময়ে নয় নম্বর সেক্টরে দায়িত্বে থাকা সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিলকে। এছাড়াও আইন-শৃংখলা
নিয়ন্ত্রণে আনাও ছিল অত্যান্ত দুরূহ কাজ। এত কিছুর পরও তিনি সুন্দর ভাবেই দেশকে সামনের
দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু তার দুর্বলতার সুযোগ
নিয়ে কিছু চাটুকার তার চারপাশে বাসা বাঁধে। ক্রমেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। মরার ওপর
খাড়ার গা হয়ে আসে ৭৪’র দুর্ভিক্ষ। পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে সেনাবাহিনীর একটা অংশে তার বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্রের বীজ রোপন করে। যে সেনাবাহিনীতে মুজীব বলতে ছিল মাথার মুকুট, সেই সেনাবাহিনীর
ভেতর তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের জন্ম নিতে থাকে। মুজীব হত্যার পর আত্ম-স্বীকৃত খুনি মেজর
ফারুক এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘তিনি আমাদেরকে যদি ঘাস খেতে বলতেন আমরা তাই খেতাম,
যদি তিনি আমাদেরকে খালি হাতে মাটি খুঁড়তে বলতেন! আমরা তাঁর জন্য তাই করতাম।’ অথচ এমন
একজন নেতাকে তারা হত্যা করল। তারা শুধু তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার পুরো পরিবারকেই
তারা হত্যা করেছে।
তুমি যাই বল বাংলাদেশ!
তোমার শরীরে মিশে আছে অভিশাাপের কালো রক্ত পিচ। এই পরিতাপের বোঝা তুমি কী করে সইবে..?
শিশু বাংলাদেশের অংকুরেই নেমে এসেছিল দুর্যোগের ঘনঘটা। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলে
সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত মানচিত্রের স্বাধীনতাকে গিলে খেতে উঠে পরে লেগেছিল একটি চক্র।
আর তাদের ষড়যন্ত্রের রসদ জোগিয়েছিল এদেশেরই
কিছু দুষ্কিতিকারি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্ভভৌমত্বে
ওপর ষড়যন্ত্র এখনো থেমে থাকেনি। আজও আছে মীর জাফরদের দল। যারা নিজেদের স্বার্থে দেশকে
বিপদে ফেলতে মোটেও পিছপা হচ্ছে না। তাই এদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রয়োজন ১৫ আগস্টের
শোককে শক্তি ও জাতীয় ঐক্যের। একমাত্র জাতীয় ঐক্যই পারে বাংলাদেশের ওপর আঘাত হানা অক্টোপাশের
হিংস্রতাকে রুখে দিয়ে স্বমহিমায় সামনে এগিয়ে যেতে।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন