ইতিহাসে চাপা পড়া মিয়ানমির গণহত্যা দিবস আজ

 ৩১ জুলাই, ১৮৫৭ সাল। দিনটি ছিল শুক্রবার। রমজান মাসের শেষ দিন, পবিত্র জামাতুল বিদা। আর মাত্র একদিন পরই মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু মুসলিম সেনাদের মুখে দুশ্চিন্তার কালো রেখা, কপাল কুঞ্চিত।   

দখলদার ইংরেজ বাহিনীর কাছ থেকে এখনো ঈদের ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হবে কিনা সেটাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চারদিকে একটা অবিশ্বাস আর ক্ষোভ দানা বাঁধছে। অবশ্য অনেক জায়গায় সেই ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঘটে গেছে ইতোমধ্যে। বিশেষ করে দিল্লীতে মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে যে বিদ্রোহের দাবানল জ্বলে ওঠেছে তা সারাদেশে প্রজ্জ্বলিত হতে শুরু করেছে। আর এই ভয়েই ভীত ইংরেজ বেনিয়াদের যত শঙ্কা মুসলিম সৈন্যদের ঈদের ছুটি নিয়ে।

এক ধরনের চাপা নিস্তব্ধতার মধ্যে সেনা কমাণ্ডের নিয়মিত কাজ চলছে। এক দিকে মুসলিম সৈন্যদের কাজে মন নেই। আবার অন্যরা যেন কিছু একটা লুকোতে চাচ্ছে মুসলিম তথা মোহামেডানদের কাছ থেকে। এর মধ্যেই পড়ন্ত বেলায় হঠাৎ করেই অফিস অর্ডার এলো মুসলিম সৈন্যদের জন্য। 

শেষ বিকেলে নিজ দফতরের কাজগুলো সেড়ে নিচ্ছেন লাহোরের অমৃতসর জেলার ডেপুটি কমিশনার (জেলা কমিশনার) ফ্রেডরিক কপার। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। জানালা দিয়ে সেই কিরণ আছড়ে পড়ছে তার টেবিলের আশেপাশে। গোটা কার্যালয় জুড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোলাহলে ভরে রয়েছে। সবাই আজ অনেক ব্যস্ত।  কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও ফ্রেডরিকের মনে আজ শান্তি নেই। অস্থিরতা তাকে ঝেঁকে বসেছে। চেয়ার থেকে উঠে রুমে কিছুক্ষণ পায়চারি করলেন তিনি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। পায়চারির মধ্যে হঠাৎ করেই থেমে গেলেন তিনি। মুখে ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো। হাত দু’টি মুষ্টিবদ্ধ করে এবার তিনি ছুটে গেলেন নিজ চেয়ারে। টেনে নিলেন এক খন্ড কাগজ আর কলম। লিখে দিলেন অফিস আদেশ। নির্দেশ জারি করলেন সকল মোহামেডান ঘোড়সওয়ার সৈনিককে ঈদে পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য ছুটি দেয়া হল।

এদিকে মুসলিম সৈন্যরা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর আনন্দে আত্মহারা। একে একে তারা ছুটে চললো আপন গন্তব্যে। কিন্তু তারা  ঘুনাক্ষরেও টের পেলেন না তাদের পেছনে তাদের জাতি ভাইদের বিরুদ্ধে কী এক ভয়ক্ষর ষড়যন্ত্র চলছে ইংরেজ সেনাবাহিনীর অন্দরে। আর সেই ভয়াবহ পরিকল্পনার সহযোগী হিসেবে রয়েছে হিন্দু শিখ সেনারা।

৩০ শে জুলাই। রাভী নদীর কুল ঘেষে গড়ে ওঠা মিয়ানমির বন্দি শিবিরে জড়ো হয়েছেন ৪ শতাধিক সেনা সদস্য। যারা কাজ করতেন ইংরেজ সেনাবাহিনীর ২৬ তম রেজিমেন্টের হয়ে। এদেরে সবাই আবার ইসলাম ধর্মের অনুসারি অর্থাৎ এরা সবাই মুসলিম। আবার এদের প্রায় সকলেই বাঙ্গালি।

সময়টা ছিল উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম অস্থীর একটা সময়। চারদিকে দখলদার ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দামামা। সেনা সদস্যদের একটা বিশাল অংশ বৃটিশদের রক্ত চক্ষুকে থোরাই কেয়ার করে সম্রাট বাহদুর শাহের “ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত ও আহাজারিরত গরীব-অসহায় জনগণের মুক্তি ও নিরাপত্তার জন্য" তাঁকে সহায়তা করার আহবানে ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেছেন।

সম্রাটের ডাকে সাড়া দিতে জনগণ যেন মুখিয়ে ছিল। তাইতো কেবল নিজেদের কেড়ে নেয়া জমিজমা আর সম্পদ লুণ্ঠনের জন্যই নয় বরং রাইফেলের গুলিতে শূকড় আর গরুর চর্বি লাগিয়ে মুসলিম ও হিন্দুদের ধর্মীয়বিশ্বাসকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে দিল্লীসহ অনেক স্থানে সৈনিকেরা বিদ্রোহ করেন। ইতিহাসের পাতায় যাকে“সিপাহী বিপ্লব” হিসেবে পরিচিত করা হয়ক। 

 কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ১০০ বছরের ঝেঁকে বসা দখলদারদের শিকড় ছাড়িয়ে যে শেখড়ে রূপ নিয়েছে তা কি অশীতিপর দুর্বল এক বৃদ্ধ সম্রাটের আহবানে ভেঙ্গে পড়বে?

তাইতো দিল্লীতে মুসলিম সৈনিকেরা যখন বিদ্রোহ করলো তখনই বৃটিশরাজ তার পাল্টা ব্যবস্থা করে ফেলে। তার অংশ হিসেবে ২৬ রেজিমেন্টের ঐ ৪ শতাধিক বাঙ্গালী মুসলিম সৈনিককে নিরস্ত্র করে মিয়ানমির বন্দি শিবিরে বন্দি করে রাখা হয় ইংরেজদের রাজকীয় নির্দেশে। কিন্তু শাহাদাতের জন্য যারা মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছে তাদেরকে কি কেবল নিরস্ত্র করে জেলে পুড়ে রাখা যায়?

না, তা সম্ভব নয়। গর্জে উঠলেন বন্দিরা। সমস্বরে গেয়ে উঠলেন লাথি মার, ভাঙ্গরে তালা!, যত সব বন্দী শালায়- আগুন-জ্বালা, -জ্বালা, ফেল উপাড়ি।

হ্যাঁ, সেদিন ইংরেজদের সেই বন্দিশালায় মুসলিম সৈনিকদের হায়দরি হাঁকে যে প্রলয় দোলা তৈরি হয়েছে তাতে সব প্রাচীর উড়ে গিয়ে প্রাচীর ভেদ করে গিয়েছে। এতে করে জুলুমবাজ শাসকের শোষণের তকতে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। যে কাঁপনে ভীত হয়ে পড়ে তারা।

সৈনিকেরা যখন বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল তখন তাদের পিছু নেয় ইংরেজ সেনারা। দুর্বল আর অনাহারক্লিষ্ট এসব সেনাদের ধাওয়া করে রাভী নদীর তীরে এসে ঘিরে ধরে তারা। তিন দিক থেকে ইংরেজ সেনাদের ঘেরাও আর পেছনে রয়েছে খড়শ্রোতা নদী 'রাভী'। উপায়ান্ত না পেয়ে মুসলিম এসব বাঙ্গালি সেনারা যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখনই ইংরেজরা নির্বিচারে গুলি বর্ষণ শুরু করে দেয়। এতে শতাধিক নিরস্ত্র মুসলিম বাঙ্গালি সৈনিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ; বিষয়টি অনেকটাই তেমন। কী করবে তারা? ভাববার জন্য এক সেকেন্ড সময়ও তাদের হাতে নেই। সময় কেবল ততটুকুই বাকি আছে ঠিক যতটুকুন সময় লাগবে নরপিচাশগুলোর রাইফেলের নিশানা ঘুরিয়ে আনতে। উপায় নেই। যে যেভাবে পারলেন, তিনি ঝাপ দিলেন নদীতে। পেছনে পড়ে রইলো শতাধিক সহযোদ্ধা, সহকর্মী ও সহজাতি বাঙ্গালী মুসলিম ভাইয়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ।

নিস্তব্ধ বিকেল। শান্ত রাভী কল কল ছল ছল শব্দে ঢেউ বয়ে দিচ্ছে। পশ্বিমের সূর্য তার অপরূপ সোনালি আভা ছড়িয়ে অস্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক দূরে সেই আভা ভেদ করে ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে বদর গলি পার হয়ে ভাটি গাঙে ফিরতে লগি চালাচ্ছেন নাও মাঝি। তার উপর দিয়ে পাখির ঝাঁক ফিরছে আপন পানে। সত্যি এক মনমুগ্ধ বিকেল। কিন্তু এখানে রোমান্টিকতার কোন রেশ নেই। শান্ত, কিন্ত খড়স্রোতা নদীর ঢেউ ভেঙ্গে সাঁতরিয়ে পাড়ে ওঠার সংগ্রাম করছেন কয়েক শ' স্বদেশপ্রেমী মুসলিম সেপাহী। যারা ছিলেন কয়েকদিনের অভুক্ত, দুর্বল। আর তাদের পেছনে ধাওয়া করছে হিংস্র খুনি ইংরেজ সেনাদের নৌযানগুলো।

সাঁতার কাটার মত শক্তি তাদের শরিরে ছিল না। তাই তাদের অনেকেরই মৃত দেহ হারিয়ে গেল নদীর তলদেশে। হাতের কাছে যে যা পেয়েছে সেটাই সে আঁকড়ে ধরেছেন বাঁচার আশায়। ভাসমান কাষ্ঠখণ্ডে ভাসতে ভাসতে অবশিষ্ট বাঙ্গালি মুসলিম সেনারা যখন পাড়ে উঠলো তখন  সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারদিকে প্রায় অন্ধকার চেপে বসেছে। পাড়ে ওঠার পর তাদের শরীরে উঠে দাঁড়ানোর মত সামান্য শক্তিটুকুও আর রইলো না। পরিশ্রান্ত তারা। তাই বেশির ভাগই গা বিছিয়ে দিলেন সবুজ জমিনে। 

চারদিকে নিস্তবদ্ধ। এসময়ে উল্কার মতই তাদের ঘিরে ধরলো হিংস্র হায়েনার দল। ফের গ্রেফতার করা হল তাদেরকে। কিন্ত সে সময়ে অনেক সৈনিকেরই চলার শক্তিটুকু শরীরে ছিল না। এই রকম ৪০-৫০ জন সৈনিককে দাঁড় করিয়ে দেয়া হল নদীর পাড়ে। তারপর ধাক্কা মেরে নদীতে ফেলে দেয়া হল তাদেরকে। ওদের আর সাঁতারের কোন শক্তি বা ইচ্ছে অবশিষ্ট রইলে না দেহপ্রাণে। সেখানেই সলিল সমাধি হয়ে গেল। বাকি যারা এখনো বেঁচে রইলো এবার তাদের দিকে বন্দুকের নল ঘুড়িয়ে আনলো খুনি ইংরেজরা। 

পরম অবসাদে চোখ বন্ধ করে ফেললেন তারা। মুখে কালেমা শাহাদাত জপতে লাগলেন। চোখের সামনে ভেসে ওঠছে পরিবার-পরিজনের ছবি। মনে মনে তাদেরকে আল্লাহর জিম্মায় সঁপে দিলেন। আর দোয়া করতে লাগলেন হে আল্লাহ, আমাদের প্রাণ নিতে চাও নাও, বিনিময়ে প্রিয় এই জন্মভূমিকে তুমি দখলদার মুক্ত করে দাও। স্বাধীনতা দাও আমাদের জাতিকে। 

কিন্তু না, গুলি ছোড়া হল না৷ হত্যা না করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হল তাদেরকে। মৃদু হাসলেন তারা। প্রস্তুতি নিলেন কোর্ট মার্শালেরমুখোমুখি হবার। ফেরত নেয়া হচ্ছে বন্দিশিবিরে।  গাদাগাদি করে নৌকাতে তাদের এমনভাবে রাখা হল যেন কোন বন্দি দাসদের নৌকা এগিয়ে যাচ্ছে নদীর ঢেউ ভেঙ্গে। 

সেদিন মধ্যরাত। চার শতাধিক সেনার মধ্যে বেঁচে আছেন মাত্র ২৮২ জন বাঙ্গালী মুসলিম সিপাহি।  মেঘের আড়াল হতে চাঁদ বেরিয়ে এসে জোস্নার আলোয় আলোকিত করেছে চারদিক। সেই আলোয় আন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে বন্দিদের কাফেলা। পেছন থেকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন সওয়ারী। 

পরদিন সকাল হলে একদল শিখ সেনা এগিয়ে এলো বন্দিদের দিকে। না, স্বদেশী ভাইদের মুক্ত করবার জন্য নয়। হোক না তারা স্বদেশী।  কিন্তু তারা তো যবন, ম্লেচ্ছ-নীচুজাতের। ওরা মুসলিম, তাই তাদের স্বাধীনতার কোন মূল্য নেই এসব হিন্দু শিখদের কাছে। তাই তো তারা কাঁদে কাদ মিলিয়েছে দখলদার ইংরেজ বেনিয়াদের সাথে। সেজন্যই বন্দি বাঙ্গালী মুসলিম সেনারা যেন আর না পালাতে পারে তার জন্য প্রচুর পরিমাণের রশি নিয়ে এলো তারা। কিন্তু শক্তিহীন ক্লান্ত অবসাদ এসব বন্দির তো আর পালানোর সুযোগ নেই, তাই বাঁধার প্রয়োজন হয়নি তাদের।  উৎসাহে ভাটা পড়লো শিখ সেনাদের। তবুও তারা খুশি মোহামেডানদের বন্দি করতে পারায়। 

১ আগস্ট। আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলিমরা উদ্যাপন করছেন তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। খুশি ইংরেজ শিবির। ফ্রেডরিক কপারও আজ বেজায় খুশি। তিনি নিশ্চিন্ত আজ অন্তত মুসলিম সেনাদের কাছ থেকে বন্দিদের ব্যপারে কোন ধরনের বাধা বা প্রতিরোধ কিংবা বিদ্রোহের সম্ভাবনা নেই। কারণ সকল মুসলিম সেনাকেই তো তিনি গতকাল পরিবারের সাথে ঈদ উদ্যাপনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছেন।

ঈদের দিন সকাল। বন্দিখানা হতে ১০ জনের একটা গ্রুপকে একত্রে বেঁধে বের করে আনা হল। তারা যখন বের হচ্ছিলেন তখন অন্য বন্দিরা তাদের পিঠ চাপড়ে সাহস জোগালেন।  বললেন ভয় পেয়ো না ভাই। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী। বিজয় আমাদের হবেই। তোমরা কেবল কোর্ট মার্শালের সময় দৃঢ় থেকো। সাহস হারাবে না।  বেঁচে থাকলে দেখা হবে। আর মৃত্যুদণ্ড দিলে জান্নাতে মিলিত হব। আল্লাহ হাফেজ।

দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছেন এক রশিতে বাঁধা দশ জনের গ্রুপটি। আজ অস্বাভাবিক তারা শান্ত । চোয়াল দু'টি শক্ত তাদের। অয়া ফেলছেন দৃপ্ত শপথে। বিচারে শাস্তি যাই হোক জন্মভূমিকে স্বাধীন করতে ইংরেজদের কোন সহায়তা তারা করবেন না। 

চলতে চলতে একটা ফাঁকা জায়গায় তাদের পথ শেষ হয়ে যায়। কোর্ট মার্শালের কোন টেবিল নয়, মাত্র কয়েক গজ দূরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কয়েকটি উদ্ধৃত রাইফেলের মুখ।   শেষ কালেমা টুকুও পড়ার সুযোগ দেয়া হল না তাদের। ছুটে আসা  রাইফেলের মুহুর্মুহু গুলিতে ঢলে পড়লেন সব সেনা। তারপরও তাদের উপরের গুলি বৃষ্টি  চলতেই থাকে। গুলি করতে করতে ইংরেজ বাহিনীর সবচেয়ে বয়ষ্ক সদস্য যিনি ছিলেন তিনি গুলিবর্ষণ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপরই কেবল তাদের এই জিঘাংসার সমাপ্তি ঘটে। 

প্রথম গ্রুপটি মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আরও দশ জনের একটি গ্রুপকে একইভাবে আনা হয় এই ফায়ারিং স্কয়ার্ডে। তারপর আরেক গ্রুপ। 

এভাবে ২৮২ জনের মধ্যে ২৩৭ জন মোহামেডানকে নির্বিচারে হত্যা করে তারা। বাকি যে ৪৫ জন অবশিষ্ট আছেন তারা গুলির আওয়াজ শোনার পর বুঝে গিয়েছেন কোর্ট মার্শাল নয় বরং তাদেরকে বিনাবিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এ কারণে তারা প্রতিবাদ করে উঠলেন। তাই তারা আর তাদের সেই অস্থায়ী বন্দিশিবির হতে বের হতে অস্বীকার করেন। এবারে ইংরেজরা বাধা দেয়নি। তারা তাদেরকে ছোট্ট একটি কুটোরিতে বন্দি রেখে সেটি ঘেরাও করে রাখে। অবশেষে অবসাদ, চরম ক্লান্তি, আতংক আর প্রচণ্ড তাপে এবং শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় এই ৪৫ জন সিপাহীরও মৃত্যু ঘটে। মৃত্যু নিশ্চত হয়ে যাওয়ার পর তাদের লাশগুলোকে টেনে হিঁচড়ে বাহিরে বের করে আনা হয়। তারপর সেই লাশগুলোকে দিয়ে দেয়া হয় গ্রামের সুইপারদের জিম্মায়। যারা সেই লাশগুলো টেনে টেনে নিয়ে গিয়ে সেই কুয়োর মধ্যে নিক্ষেপ করে যেখানে আগের গুলি করে হত্যা করা ২৩৭ জনের লাশও নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। 

  

আর এভাবেই মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পালিয়ে যাওয়া ৪০০ জনেরও বেশি বাংগালী মুসলিম সিপাহী পাকড়াও করে বিনা বিচারে হত্যা করা হয় এবং গোটা একটা রেজিমেন্ট ডেস্ট্রয় করে দেয়া হয় ইংরেজ এবং তাদের সহযোগী শিখ সেনারা। এরপর ফ্রেডরিক কপার নিজের বীরত্ব জাহির করে সব ঘটানা আদ্যোপান্ত চিঠি লিখে ইংরেজ পররাষ্ট্র দফতরকে অভিহিত করেন।


দেড়শ বছর আগে সিপাহী বিদ্রোহের সময় বাঙ্গালী মুসলিম বীরদের যে গণহত্যা করা হয় আজ তার বর্ষপূর্তি।  কিন্তু আমাদের পাঠ্যবইয়ের কোন পৃষ্ঠাতে কি এসব ইতিহাস পড়ানো হয়? আমাদের প্রজন্মের কাছে সিপাহী বিদ্রোহে শহীদ হওয়া ক'জন মুসলিম সেপাহীর নাম জানে? ওরা তো সেপাহি বিদ্রোহ বলতে কেবল মঙ্গল পাণ্ডের নামই জানে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সীমাবদ্ধতাঃ দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা

কথাগুলো 'সাম্প্রদায়িক'

Coverage of Local Development Issues in Regional Newspaper of Chattogram