ডাক্তার হয়েও তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অন্যতম হোতা


লিখেছেন ০৮ অক্টোবর ২০১২, সন্ধ্যা ০৭:৩১

১৯ এপ্রিল, ১৯৬৫ সালদার-এস-সালাম শহরের উপকণ্ঠে একই নামের বিমান বন্দরে নামলেন শহরে নতুন ধরনের তিনজন লোক ড্রেকো, পাপি আর তাদের দলনেতাসম্পূর্ণ স্যুটেড তিন ব্যক্তিরই রয়েছে ছদ্মবেশকৃষ্ণাঙ্গদের দেশে শেতাঙ্গ! এই মোটেও অস্বাবিক নয়কৃষ্ণাঙ্গরাতো আর শেতাঙ্গদের মত সংকীর্ণ জাতীয়াতাবাদের ধ্বজাধারি নয় যে, তখনই তাদেরকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে তাদের দেশ থেকেকারো কোন রকম কৌতুহলই হল না! তাদেরকে নিয়েতবে হ্যাঁ একজনের অবশ্যই কৌতুল সৃষ্টি হয়েছে, সে আর কেউ নয়আগত তিনজন লোকের
মধ্যে যিনি দল নেতা তার পুরোন সহযোগী ও সে দেশে তাদের দেশের নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পাবলো রিবাল্টাতার যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে, ছদ্মবেশধারিদের
সুদূঢ় প্রসারি এক মহা ষড়যন্ত্রের বীজ নিয়ে এরা পা দিয়েছে কালোদের রাজত্বে, যেখানে আজও কোন রকমের সৌভ্যতা তেমন একটা পৌঁছেনিতাদের সহযোগীতার জন্য ছড়িয়ে আছে মিশর, তাঞ্জানিয়া, আলবেনিয়াসহ ভিবিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আরো অনেকেই চলে এসেছে আগেই, তারা এখন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেপুরসত কোথায় কঙ্গোর গোয়েন্দারে এদের ব্যাপারে ভাবনার? একেতো তারা অত প্রশিক্ষিত না, তার ওপর দেশের বিদ্রোহীদের পেছনেই চলে যায় তাদের সময়
রাষ্ট্রদূত পাবলো রিবাল্টা দার-এস-সালামের একেবারেই শহরতলীতে আগত কামান্ডোদের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাদের থাকর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছেসেখানে পৌঁছে স্থানীয় সোহেলী ভাষা ঘেটে তাদের তিন জনের জন্য তিনটি নাম পছন্দ করলেনড্রোকোর নাম হয় মোজা, পাপির নাম দেয়া হয় মবলি আর নেতার নিজের ঠিক করেন টাটোসোহেলী ভাষায় এর অর্র্থ হচ্ছে এক, দুই, আর তিন
সাত মাসের চেয়ে অধিক সময় কঙ্গোর সেনাবাহিনীর সাথে একে একে অনেক গুলো সঙ্গাতে জড়িয়ে পড়ে এই টাটোর নেতৃত্বাধীন রক্তপিপাসু সুদূড় দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উড়ে আসা হায়েনার দলঅনেক ক্ষয়-ক্ষতি আর জীবন-মাল ধ্বংসের পর অবশেষে কঙ্গোর সেনাবাহিনী তাদের হঠিয়ে দিতে সামর্থ হয়তারা পালিয়ে বাঁচেএরপর রাশিয়ার কেজিবির সহায়তায় টাটো ও তার দুই সহযোগী রাশিয়া হয়ে ফিরে যায় আবার কিউবায়
পরে এই স্বশস্ত্র সন্ত্রাস ব্যার্থ হওয়ার পেছনে নিজ লেখা পর্সাজাস ডি লা গুয়েরা রেভ্যুলুসানিরা কঙ্গোবইতে যে কারন উল্লেখ করেছেন, তাতেই তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ধীকৃত হওয়ার চিত্র ফুটে ওঠেতার বইতে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই আমি নিজেকে বাস্তবের চেয়ে অনেক ওপরে নিয়ে গেছি আমার আত্মপ্রসন্নতাকেনিজের এই পথকে ক্ষতিকর বলতেও পিছ পা হননি তিনি, নিজ আত্মপ্রসাধ থেকেকঙ্গোর কৃষকরা তার মরিচিকাময় স্বপ্নে গা না ভাসিয়ে দেয়ায় স্থানীয় কমিউনিষ্ট পর্টি বুঝে গেছে গত ৬/৭ মাসের বিপ্লবের নামে তারা যা করছে, তা কেবলই দেশদ্রোহিতা আর প-শ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়তাই তারা আর টাটোকে সহযোগীতা করতে রাজি হয়নি
হ্যাঁ, এই টাটোই হল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অন্যতম পথিকৃত চে গুয়েভারা১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিওয় জন্ম নেয়া চে গুয়েভারার প্রকৃত নাম আরনেস্তো গুয়েভারা ডি লা সেরনাবাবা-মায়ের আদরের ডাক নাম দেয়া তেতো ১৯৫৩ সালে ডাক্তারি পাম করার পর মাথায় পোঁক ঢুকে১৯৫৫ সালে তার সাথে পরিচয় হয় বর্তমান কিউবার সরকার প্রধান ফিদেল কেস্ট্রোর সাথেএরপরই শুরু তার
১৯৫৯ সালে কিউবায় সশস্ত্র ক্ষমতা দখলের পর তাকে ফিদেল ক্যাস্ট্রো কিউবার রাষ্ট্রিয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করেএরপর দুই বছর পর ১৯৬১ সালে তাকে কিউবার শিল্পমন্ত্রী করা হয়
চার বছর মন্ত্রীত্ব থাকার পর তার শরীরে আবার রক্তের নেশা ধরেতাই চে গুয়েভারা পাড়ি জমায় কঙ্গোতেকিন্তু সেখান থেকে তাকে জান বাঁচিয়ে কিউবায় ফেরত যেতে হয়এরপরও তার রক্ত ক্ষুদা থেকে যায়তাই চে গুয়েভারা এবার যায় পাড়ি জমায় বলিভিয়ায় ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখ
এরপর আর কি.... প্রায় এক বছর যাবত চে গুয়েভারা আর তার দোষররা বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ঘুম হারাম করে দেয়বহু জান-মালের ক্ষুত হয়কত সন্তান তার বাবাকে, স্ত্রী তার স্বামিকে, মা-বাবা তাদের সন্তানকে হারয়েছে তার সঠিক খবর কারো জান নেই! তার অত্যাচারে বলিভিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনী এতই অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে যে, তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য সে সময়ে বলিভিয়ার সরকার ৫০,০০০ বলিভিয়ান ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করে
সব কিছুরই একদিন শেষ আছে, চে গুয়েভারারও৭ অক্টোবর ১৯৬৭ রাতে তার ১৭ সদস্যের গেরিলা বাহিনী ইউরো গিরিখাতের পাদদেশে অবস্থান নেয়এক
আলুচাষী গেরিলাদের দেখতে পেয়ে সেনাক্যা¤েপ গেরিলাদের আগমনের সংবাদ পৌঁছে দেয়বলিভিয়ার সেনাবাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে
এর পর ৮ অক্টোবর দুপুরে সৈন্যরা গেরিলাদের ওপর তীব্র গুলিবর্ষণ করে গেরিলারাও পাল্টা গুলি করেতুমুল গোলাগুলিতে গেরিলা স্কোয়াড একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েবলিভীয় সৈন্যদের গুলিতে চে গুয়েভারার বাম পায়ের গুলি লাগেএরপর তাকে বন্দি করা হয়এরপর ৯ অক্টোবর তাকে সামরিক স্কোয়ার্ডের মাধ্যমে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয়
একটি দেশের মন্ত্রী, গোপনে যখন অন্য ধেশে গিয়ে সেই দেশের সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করে, তখন এর চেয়ে বড় অপরাধ সম্ভবত আর থাকার কথা নয় কঙ্গোর সরকার ও জনগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় এক সময় পিছু হটতে বাদ্য হওয়ার পরও তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ক্ষান্ত হয়নিএরপর বালভিয়ার সরকার ও জনগণকে এতটাই অতিষ্ট করে যে, শেষে একজন সাধারণ কৃষকই তাকে ধরিয়ে দেয় যে কৃষক-শ্রমিকদের পুঁজি করে তারা নীজের আখে গোছায়, সেই কৃষক আর শ্রমিক শ্রেণীই তাদের বিনাশ করবে একদিন
বড়ই অবাক লাগে আমাদের দেশের কিছু উম্মাদ ছেরে পেলে এই রকম একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীর ছবি সম্বিলিত গেঞ্জি, শার্ট পরে রাস্তায় চলা ফেরা করে! অবশ্য এসব যুবকরা আদৌ জানেও না, কে এই লোক আর কিইবা তার পরিচয় বলিভিয়ার সরকার যদি জনসম্মুখে তার যথাযথ বিচার করতে পারতো, তাহলে হয়তো পৃথিবীর চেহারাই অন্য রকম হতআর বর্তমানা দুনিয়ায় লাদেন গংদেরও উদ্ভব হত নাএরা সবাই একই মানের সন্ত্রাসীএরা মানুষের সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে ফেরেতাই এদের নিপাত প্রয়োজন পৃথিবীর স্বার্থে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা চলচ্চিত্রের সংকট ও সীমাবদ্ধতাঃ দুইটি বাংলা চলচ্চিত্রের পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা

কথাগুলো 'সাম্প্রদায়িক'

Coverage of Local Development Issues in Regional Newspaper of Chattogram